ডাবল স্ট্যান্ডার্ড-৩ এর জন্য লেখা। ফিনিশিং হয়নি। পরিস্থিতির প্রাসঙ্গিকতা বিবেচনায় আধাসেদ্ধ-ই দিলাম। আপাতত কাঁচা কাঁচাই পড়েন। বইয়ে পাকা টসটসে পাবেন ইনশাআল্লাহ।
... ... ... হৃদয়ের গহন থেকে উঠে আসা অনেকগুলো কথা বলে মিঠুন জিরিয়ে নেয়। ইমরানকে সুযোগ দেয় ভাবার। আবার নৌকো জুড়ে নেবে আসে নৈঃশব্দ্য। ইমরান যেন আজ নতুন করে নিজেকে চিনতে পারছে। আলোকিত এই নিস্তব্ধ রাতে নৌকোর তলা দিয়ে কুলকুল শব্দ তুলে বয়ে যায় মখমলি নদী। বুকের ভিতর কোথায় যেন ইমরান অনুভব করে এক বয়ে চলা নদী। স্থির, কিন্তু গতিময়।
‘আচ্ছা’, অনেকক্ষণ বাদে অস্ফুট স্বরে বলে ওঠে ইমরান।
‘নবিদের স্বপ্নও ওহী। নবিজি স্বপ্নযোগে আল্লাহর আদেশ পেয়েই আম্মা আয়শাকে বিয়ে করেছেন। যেহেতু তাঁরই কথায় অদেখা আল্লাহকে বিশ্বাস করে মুসলিম হয়েছি, তাঁর এ কথাও আমরা বিনাবাক্যে মেনে নিয়েছি। ব্যস।’
‘আচ্ছা, আচ্ছা। তাঁর কথায় যে আল্লাহকে বিশ্বাস করে নিয়েছি, সেই আল্লাহই আদেশ করেছেন আয়িশা রা. কে বিয়ে করতে। [১] ২য় অংশটা বিশ্বাস না হলে, ১ম অংশটাতেও আমার সন্দেহ আছে বুঝা যায়। তার মানে ২য় অংশ নিয়ে যার সন্দেহ আছে, সে আসলে নবিজির বলা আল্লাহতে বিশ্বাসই করেনি, রাইট?’
‘হ্যাঁ। মুসলিম তো এতোটুকুতেই খুশি। যে লোক নবিজির বলা আল্লাহকে বিশ্বাস করেছে, তার জন্য এতটুকু জবাবই যথেষ্ট যে, এটা আল্লাহর আদেশ। এজন্যই আমি বিষয়টা জানি, কিন্তু আমার মনে কোনো প্রশ্ন নেই।’
‘আমারও এখন আর কোনো প্রশ্ন নেই, দোস্ত। আলহামদুলিল্লাহ।’
‘আলহামদুলিল্লাহ। তবে যুক্তি দিয়ে বুঝাও কঠিন না, ইমরান। এবার দেখি চল যুক্তি কী বলে? আম্মা খাদিজার ইন্তিকালের পর ৩ বছর নবিজি স্ত্রী-হীন অবস্থায় ছিলেন। [২] যারা বলে নবিজি কামুক ছিলেন বলে বিয়ে করেছেন, তাদের অভিযোগ এখানেই মার খেয়ে যায়।’
‘আসলেই কামুক লোক তো দুইটা বছর স্ত্রী ছাড়া থাকবে না। ঠিকই তো।’
‘হ্যাঁ, ২৫ বছর বয়েস থেকে ৫০ বছর বয়েস অব্দি নবিজি খাদিজা রা. ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করেননি। যৌবনের মূল অংশটাই একজন প্রৌঢ়া নারীর সাথে পার করেছেন। এটাও কামুকতার বিপরীত।’
‘আমাকে একজন নাস্তিক অবশ্য যুক্তি দিয়েছে, যেহেতু নবিজি ছিলেন দরিদ্র এবং মা খাদিজার সম্পদের মুখাপেক্ষী ছিলেন, তাই আরও বিয়ে করার সাহস করে উঠতে পারেননি।’
‘তাই যদি হয়, তবে আম্মা খাদিজার মৃত্যুর সাথে সাথে ঠাস ঠাস করে বিয়ে করার কথা। তা না করে ২ বছর সঙ্গীহীন কাটালেন কেন? তখন তো আর বাধ্য ছিলেন না। সম্পদ হারানোর ভয় ছিলো না। রাইট?’
‘হ্যাঁ, তাই তো।’
‘আম্মা আয়েশাই বর্ণনা করেন নিজের বিয়ের কাহিনি। তিনি বলেন: খাদিজা রা. এর ইন্তিকালের বছর দুয়েক পর একদিন খাওলা বিনতে হাকিম রা. এসে বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ, আপনি কি আর বিয়ে-শাদী করবেন না? নবিজি জিগ্যেস করলেন: তুমিই বলো কাকে বিয়ে করতে পারি? খাওলা জানালেন: কুমারী ও আগে বিবাহিতা দুই রকম পাত্রীই আছে। কুমারী হল আপনার বন্ধুকন্যা আয়েশা। আর বিধবা আছে সাওদা রা.।
‘মানে, প্রস্তাব নবিজি নিজে করেননি। বরং তাঁকেই প্রস্তাব দেয়া হয়েছে?’ [ক] অবাক হয় ইমরান। এরা ব্লগে কীসব মিছে কথা লিখে রেখেছে দেখো দেখি।
‘হ্যাঁ, আমরা যতই ‘মাত্র ৬ বছর, মাত্র ৬ বছর’ বলে কান্নাকাটি করি, সেই ৬ বছরেই অলরেডি আয়শা রা. এর অন্য এক জায়গায় বাগদান হয়েই ছিল। মুতঈম ইবনে আদীর ছেলের সাথে। মানে ৬ বছর বয়সেই মক্কায় পাত্রী হিসেবে তাঁর নামডাক ছিল। অর্থাৎ নবিজি একজন শিশুকে বিয়ে করেননি। বরং অলরেডি পাত্রী হিসেবে বিয়ের বাজারে আলোচিত একজনকেই বিয়ে করেছেন। [খ] তাই না?’
‘আরে তাই তো।’
‘আবার আগের সম্বন্ধটাও নবিজি ভাঙেননি। [গ] আবু বকর রা.-কে মুতঈমের স্ত্রী (পাত্রের মা) জানিয়ে দিয়েছে, যেহেতু পাত্রীর মা-বাবা ধর্মত্যাগ করেছে, অতএব এই মেয়ে আমাদেরকেও ধর্মহীন করে ফেলবে। ভেঙে দিলাম এই সম্বন্ধ।’
'ওওও, তাহলে এখানে নবিজির কোনো ভূমিকাই নেই দেখছি।
- প্রস্তাবও নবিজি নিজ থেকে দেননি [ক] [৩]
- অলরেডি আম্মা আয়েশার সাথে আরেকজনের বিয়ের সম্বন্ধ চলছিল। [খ] বিয়ে নবিজি না করলেও অন্য কেউ করতো সেই বয়সেই। আরবে এই বয়সে এটাই ছিল নর্মাল।
- আগের সম্বন্ধটাও নবিজি ভাঙেননি। [গ] তাহলে এখানে নবিজির কী দোষ?’
‘আরও দুটো ইস্যু আছে। বন্ধুর মেয়েকে বিয়ে করা। যে কিনা নবিকন্যা ফাতিমার চেয়েও বয়সে ছোটো। ৯ বছরে আম্মাজানকে যখন উঠিয়ে নেন, তখন শারীরিকভাবে তো তিনি আর শিশু নেই। আম্মা আয়শা বলছেন: আমার মা আমাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সংসারে পাঠাতে চাচ্ছিলেন। এজন্য তিনি চাচ্ছিলেন, আমার দ্রুত দৈহিক বৃদ্ধি হোক, এজন্য চিকিৎসাও করাতেন। কিছুতেই কিছু হলো না। পরে আমি তাজা খেজুরের সাথে শসা মিশিয়ে খেতে লাগলাম। ফলে ব্যাপক দৈহিক গ্রোথ হয়ে গেল। [৪] অর্থাৎ ৯ বছর বয়সে আম্মা আয়শা পরিণত নারীর মত গড়নে পৌঁছে গেছেন। অভিযোগ করা হয়, নবিজি শিশুকামী। আমি যদি শিশুকামীই হই, তাহলে বিয়ে করে সাথে সাথেই শিশুকে উঠিয়ে নেবো ভোগ করার জন্য, নাকি? ৩ বছর পর বড় মানুষের মতো হয়ে গেলে তো শিশুকামীর লস। ফ্যান্টাসি পূরণ হলো না৷ যেহেতু শিশুভোগের জন্যই বিয়ে করেছি। তাই না? লজিক্যালি ভাব।
''হ্যাঁ, তা-ই তো করার কথা।’
''৩ বছর পর উঠিয়ে নিয়েছেন, মানে নবিজি কামনা থেকে বিয়ে করেননি। আল্লাহর আদেশে করেছেন। হালাল হওয়া সত্ত্বেও ধৈর্যধারণ করেছেন। আল্লাহর যখন আদেশ হয়েছে, ঘরে তুলে নিয়েছেন।’
''নাস্তিকদের সাইটে দেখলাম, নবিজির কাছে মাহর পরিশোধের মত অর্থ ছিল না। এই জন্য দেরি করেছেন।’
''যদি কামুকই হতেন, তবে টাকা কোনো বাধা না। ৯ বছরে উঠিয়ে নিয়েছেন তো সেই আবু বকরের থেকে ধার করেই। ধার যখন করলেনই, আগে করলেই পারতেন। পারতেন না? ধার দেবার লোকের অভাব পড়েছিলো? আবার, মাহর পরে দিলেও কোনো সমস্যা ছিল না।’
''হুমমম… লজিক্যাল।’
''আরও আছে ৬-৯ এই তিন বছর নবিজির স্ত্রী ছিলেন কেবল আম্মা সাওদা রা. যার বয়স তখন ৫৫+। যদি শিশুকামীই হতেন, বা সাধারণ কামুকও হতেন যৌবনের শ্রেষ্ঠ সময়টিতে আম্মা খাদিজার সাথে ২৫ বছর এবং আম্মা সাওদার একার সাথে ৩ বছর সংসার করতেন না। হিসেব মেলে না। আরেকটা জিনিস আমি ভেবে বের করেছি। শুনবি? গতকাল আমাদের মাদরাসায় প্রোগ্রামে ছিলি না?’
''ছিলাম তো।’
''একটা জিনিস খেয়াল করেছিস?’
''কী?’
''হাফেজি পড়া বাচ্চাগুলো ৭-১১ বছরের।’
''তো?’
''এতো ছোটো বয়সেই এদেরকে আবাসিকে দেয়া হয় কুরআন মুখস্তের জন্য। এই বয়সে ৬২৩৬টা আয়াত মুখস্ত করছে তারা। মগজে বসে যাবে, সারাজীবন আর সরবে না। ওয়ার্ড বাই ওয়ার্ড। কেন বলতো?’
''ছোটো মানুষ। ব্রেইন এখন ফ্রেশ। সহজে মুখস্ত হয়, মেমোরি ভালো থাকে। দুনিয়াবি কোনো চিন্তাভাবনা নেই। নিষ্ঠুর পৃথিবীর প্যাঁচগোচ এখনও এসে সারেনি মগজে।’
''ঠিক ধরেছিস। আম্মা আয়শা এই কুরআন তো মুখস্ত করেছেনই। [৫] সাথে নবিজি থেকে ২২১০টা হাদিস হুবহু শব্দে বর্ণনা করেছেন সারাজীবন। নবিজির ইনতিকালের সময় তাঁর বয়স ছিল ১৮, মারা যান ৬৭ বছর বয়সে। এই লম্বা ৪৯ বছর তিনি এই হাদিসগুলো বর্ণনা করেছেন, এগুলোর ভিত্তিতে আইনী সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। যার অধিকাংশই ছিল নবিজির একান্ত ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কিত। [৬] এবং এমন এমন হাদিস তিনি একাই বর্ণনা করেছেন, যা স্ত্রী ছাড়া আর কারও পক্ষে জানা সম্ভব ছিল না। [৭] যেমন…
- স্বপ্নদোষ হলে কাপড়ে লেগে থাকা বীর্য কী করতে হবে? নবিজি কী করতেন? এটা কে জানবে? এটা জানতে হলে স্ত্রী হতে হবে। আম্মা আয়িশা জানিয়েছেন: ''এমনটা হলে আমি কাপড় না ভিজিয়ে চিমটে চিমটে নখ দিয়ে উঠিয়ে ফেলতাম।’ এভাবে নারীদের পবিত্রতা-ইবাদত-দায়িত্ব বিষয়ক সিদ্ধান্তের দলিল যত হাদিস, পরিবার ও দাম্পত্য বিষয়ক আইনী যত হাদিস তার অধিকাংশটারই উৎস আম্মা আয়িশা। [৮]
- আরেকটা উদাহরণ দিই। আম্মা আয়িশা জানিয়েছেন: নবিজি গোসল ফরয অবস্থাতেই ফজর করতেন, এবং রোযা রাখতেন। সুতরাং নাপাক অবস্থায় সেহরির সময় পার হয়ে গেলেও রোজা হবে। এটা উম্মতকে জানানোর জন্য স্ত্রী ছাড়া কারও পক্ষে জানা সম্ভব না। আবু হুরাইরা বলে দিয়েছিলেন যে রোজা হবে না। পরে আম্মাজানের মতামত শুনে সংশোধন করে নেন। [৯]
- আবার দেখ, নবিজি কিয়ামুল লাইল বা তাহাজ্জুদ নামায কখনোই ছাড়তেন না। এমনকি অসুস্থ হলে কিংবা অলসতা ভাব থাকলেও ছেড়ে দিতেন না, বরং বসে বসে পড়তেন। নবিজি সারারাত কী করতেন এটা স্ত্রী ছাড়া কার পক্ষে জানা সম্ভব? [১০]
শুধু মুখস্ত রাখাই না। নবিজি যেমন শব্দে বলেছেন, হুবহু তেমনই বর্ণনা করেছেন ৫০ বছর ধরে। সবচেয়ে বেশি হাদিস বর্ণনাকারী সাহাবি আবু হুরাইরা রা.-ও আম্মাজানের ঘরের কাছে এসে নিজের মুখস্ত হাদিসগুলো শোনাতেন, হাদিসের শব্দগুলো ঠিক করে নিতেন। [১১] মানে কোন লেভেলের মুখস্ত রাখতে হয়েছে ওনাকে, ভেবে দেখ। যখনই সাহাবিরা নবিজির কোনো হাদিসের বেলায় দ্বিধাদ্বন্দ্বে পরে যেতেন, সমাধান কোথায়? সমাধান আম্মা আয়েশা রা.। [১২]
অর্থাৎ এমন ২২১০ বাক্য তাঁকে স্থায়ীভাবে মুখস্ত রাখতে হয়েছে যা জানতে হলে হতে হবে স্ত্রী মানে একান্ত নিকটসঙ্গী এবং ৫০ বছর ধরে এগুলো হুবহু মুখস্ত রাখতে হলে হতে হবে একজন …
''একজন ছোটো মানুষ। ইয়েস …
''নবিজির অন্যান্য স্ত্রীরা এতো হাদিস বর্ণনা করেননি। আয়শা রা. ২২১০ আর নিকটতম আম্মাজান উম্মে সালামা রা. ৩৭৮ টি। বাকিরা আরও কম। [১৩] এ থেকে পরিষ্কার যে, পার্থিব সিস্টেম মোতাবেক ইসলামী আইনশাস্ত্রের এই ২২১০টি উৎস সংরক্ষণ করতে হলে কমবয়েসি একজন স্ত্রী নবিজির সাথে থাকা প্রয়োজন। এটা শরীয়া হিফাজতে আল্লাহরই হিকমাহ। আল্লাহ তাঁর ব্যবস্থাপনা মোতাবেক কমবয়েসী স্ত্রী দ্বারা নবি-বচনগুলো হুবহু সংরক্ষণ করেছেন৷ যা অন্য কোনোভাবে সম্ভব ছিল না বাহ্যদৃষ্টে।
স্ত্রী হবার সুবাদে তিনি নবিজির সাথে একান্তে অবস্থান করতে পেরেছেন। প্রকাশ্যে তিনি রাসূলের সাথে ছিলেন, গোপনে তিনি রাসূলের সাথে ছিলেন। দিনে ছিলেন, রাতে ছিলেন। সফরে ছিলেন, ঘরে তাঁর সাথে ছিলেন। এমন সুযোগ আর কারও পক্ষে পাওয়া সম্ভব না। আর নিভৃতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যা কিছু বলেছেন তিনি একাই শুনেছেন। দ্বিতীয় কেউই তাঁর সাথে ছিল না। [১৪]
আম্মাজানের মূল কার্যক্রম শুরু হবে ৯ বছর বয়সে, মদীনা জীবনের শুরুতে। মদীনা জীবন জুড়ে তাকে থাকতে হবে। মক্কার জীবনে তেমন প্রয়োজন ছিল না। কেননা শরীয়তের অধিকাংশ নিয়ম এসেছে মদীনায়। আম্মা আয়শাকে ঠিক ঐ মুহূর্তেই প্রয়োজন। তবে বিয়েটা কিন্তু হতে হবে ৬ বছরেই, নইলে বাগদান হয়ে গিয়েছিলো, বিয়ে হয়ে যাচ্ছিল অন্যত্র।
''ক্লিয়ার।
''আরও ক্লিয়ার করি। আম্মা আয়শা ছিলেন নানা বিষয়ে পণ্ডিত।
- তাঁর আরেক স্পেশালিটি আইনশাস্ত্র, যা তিনি পরবর্তী জীবনে উম্মতকে শেখাবেন। বড় বড় সাহাবীরা তাঁর কাছে ফতোয়া ও হাদিসের ক্লারিফিকেশনের জন্য আসবেন। বর্ণিত আছে, ‘আয়েশা (রা.) থেকে শরিয়তের এক-চতুর্থাংশ বিধি-বিধান বর্ণিত আছে। বড় বড় সাহাবিরা যেকোনো সমাধানের জন্য আয়েশা (রা.)-এর কাছে আসতেন।’ [১৫] আবু বাকর, উসমান ও আলী রা.-এর খিলাফতকালে অনেক আইনী সিদ্ধান্ত আয়েশা রা. দিতেন। [১৬]
- তিনি ছিলেন আরবি ভাষা-সাহিত্যের পণ্ডিত ও কবি। [১৭] বিপুল সংখ্যক প্রাক-ইসলামি আরবি কাব্য তাঁর মুখস্ত ছিল। [১৮] কথায় কথায় আরবি কাব্য থেকে উদাহরণ দিতেন। আরবি সাহিত্যের গ্রন্থগুলো আয়েশা রা. এর কবিতায় ভরপুর [১৯]।
- চিকিৎসাবিদ্যার কথা বললে শুধু মেডিসিন না, [২০] সার্জারিতেও [২১] তিনি ছিলেন বিখ্যাত।
সুতরাং ইসলামী শরীয়তের এক-চতুর্থাংশ যাঁকে ধারণ করতে হবে, [২২] তাঁকে শরীয়তের উৎস হিসেবে ''তৈরি' করতে হবে। এতোকিছুর জন্য তাঁকে দীর্ঘদিন শিখতে পড়তে হবে। অতএব, স্কুলিং এইজের কাউকেই ফার্স্টলেডি হিসেবে আসতে হবে। পড়াশোনা করার বয়স যার। ৯ থেকে ১৮ প্রায় ৯ বছর তাঁকে শিখতে পড়তে হবে, তাকে স্কুলিং করাতে হবে উম্মতকে পরের ৫০ বছর ধরে শেখানোর জন্য। ঠিক আছে না?’
মিঠুনের প্রতিটা প্রশ্নের শেষে ইমরানের মনে হচ্ছে, আরে এটা তো আমি জানি। আসলে আমরা অনেক কিছুই জানি। অভিজ্ঞতা থেকে, বই পড়ে। কিন্তু যখন বাস্তব সমস্যা বা প্রশ্ন সামনে আসে, তখন জানা জিনিসগুলো মেলাতে পারি না। কেউ মিলিয়ে দিলে মনে হয়, আরে তাই তো।
''আরেকটা বিষয় চিন্তার আছে ইমরান। নবিজির দুশমনেরা কিন্তু কেউ এই বিয়েটাকে তাঁর চরিত্র হননে ব্যবহার করেনি? ৫০ বছরের একজন প্রৌঢ়ের ৬ বছরের মেয়েকে বিয়েটা আমাদের কাছে যেমন লাগছে, তেমনটা যদি তাদের কাছেও ঠেকতো; এই সুযোগ আবু জেহেল, আবু লাহাব, মুনাফিক উবাই-রা ছেড়ে দিতো? যারা নবিজির বিরোধিতাকে জীবনে মিশন বানিয়ে নিয়েছে, হত্যা করার জন্য যারা উন্মুখ তারা এতো বড় ইস্যু পেয়েও ছেড়ে দেবে, ব্যাপারটা সচেতন মাথায় ধরে না।’
তবে, জানার পরিধি তো বাড়াতেই হবে। ইনফো না থাকলে মেলাবো কী? হাওয়া? সন্দেহ-সংশয় জাগতে বেশি জানতে হয় না। সন্দেহ করার জন্য না-জানাটাই যথেষ্ট, অজ্ঞতাই রাস্তা করে দেয় সন্দেহের। কিন্তু সন্দেহ দূর হতে হলে জানতে হয়। বা উল্টো করে বললে, জ্ঞান সন্দেহ দূর করে।
‘যে জানে না আর যে জানে, দুইয়ে কি সমান হতে পারে’।
পারে বলেন?
রেফারেন্স:
[২] আম্মা আয়েশা বলেন: আমি সর্বাধিক ঈর্ষা করতাম খাদিজা রা. কে নিয়ে। আর কাউকে ততটা ঈর্ষা করতাম না। আমার বিয়ের তিন বছর পূর্বে খাদিজা রা. ইন্তেকাল করেন।… [বুখারি ৩৮১৭, মুসলিম ২৪৩৫]
[৩] বরং নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একটি উত্তম পরামর্শের অনুসরণ করেছেন। আয়েশা রা. কে বিয়ে করার ইচ্ছা ছিল না নবিজির মাঝে। এই চিন্তাটা ছিল মূলত বিশিষ্ট নারী সাহাবি খাওলা বিনতে হাকীমের।
[শাইখ আবদুল হামিদ মাহমুদ তাহমায, আয়েশা বিনতে আবু বাকর রা., দ্বীন পাবলিকেশন, পৃ: ৩১৫]
[৪] আমার মা আমাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সংসারে পাঠাতে চাচ্ছিলেন বিধায় আমার দৈহিক পরিপুষ্টির জন্য চিকিৎসা করাতেন। কিন্তু তা কোন উপকারে আসলো না। অবশেষে আমি তাজা খেজুরের সাথে শসা মিশিয়ে খেলাম এবং উত্তমরূপে দৈহিক পরিপুষ্টি লাভ করলাম।
আবূ দাউদ ৩৯০৩, সহীহাহ ১/৮৫, ৮৬। তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।
[৫] মুহাম্মাদ আয-যারকানী ''মানাহিল আল-ইরফান ফী উলুমিল কুরআন' গ্রন্থে আবু উবাইদ আল-কাসিম ইবনে সাল্লাম (মৃ: ২২৪ হি.) রচিত কিতাবুল ক্বিরাত সূত্রে উল্লেখ করেন:
" বিপুল সংখ্যক সাহাবি নবিজির জীবদ্দশায় পূর্ণ কুরআন হিফজ করেন যার মধ্যে রয়েছেন: চার খলিফা, তালহা, সাদ, ইবনে মাসঊদ, হুযাইফা, সালিম, আবু হুরাইরা, ইবনে উমর, ইবনে আব্বাস, আমর ইবনে আস ও তাঁর ছেলে আব্দুল্লাহ, মুয়াবিয়া, ইবনে যুবাইর, আবদুল্লাহ ইবনে সায়্যিব, আম্মা আয়িশা, আম্মা হাফসা, আম্মা উম্মে সালামা। এঁরা সবাই ছিলেন মুহাজিরদের মধ্য থেকে। রাদিয়াল্লাহু আনহুম আজমাঈন।
[৬] Sayeed, Asma (6 August 2013). Women and the Transmission of Religious Knowledge in Islam. Cambridge University Press. pp. 27–9
[৭] সাহাবায়ে কেরাম রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে যে সমস্ত হাদিস বর্ণনা করেছেন, তার অধিকাংশ হাদিসই আরও অনেক সাহাবির মুখে বর্ণনা হয়েছে। একই হাদিস অনেকে (শুনেছেন এবং) বর্ণনা করেছেন। পক্ষান্তরে উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা. যে হাদিসগুলো বর্ণনা করেছেন, তার অধিকাংশ হাদিসই ''একক হাদিস', যা অন্য কেউ বর্ণনা করেননি। বরং অন্যান্য সাহাবিরা তাঁর সূত্রে বর্ণনা করেছেন।…
আয়েশা রা. না থাকলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাত, বিশেষ করে ঐ সমস্ত ব্যক্তিগত আমল, যা তিনি ঘরে থাকা অবস্থায় করতেন, সেগুলো হারিয়ে যেতো। উম্মাহর কাছে অজানাই থেকে যেতো।
[শাইখ আবদুল হামিদ মাহমুদ তাহমায, আয়েশা বিনতে আবু বাকর রা., দ্বীন পাবলিকেশন, পৃ: ২৬৫]
[৮] উমার রা. নারীদের সাথে সম্পৃক্ত সকল বিষয়ে এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ঘর সম্বন্ধীয় বিষয়ে আয়েশা রা. কে জিগ্যেস করে তবেই নিশ্চিত হতেন।
[৯] ইমাম বদরুদ্দিন যারকাশী রহ. একটি কিতাব রচনা করেছেন। তাতে তিনি ঐ সকল হাদিস সংকলন করেছেন, যা সাহাবায়ে কিরাম রা. বর্ণনার পর আয়েশা রা. সংশোধন করে দিয়েছেন।
[১০] মুসনাদে আহমাদ ৬/২৪৯
[১১] উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা. হাদিসের শব্দ ও উচ্চারণের প্রতি ছিলেন খুবই যত্নশীল। অর্থ ঠিক রেখে শব্দ পরিবর্তন করে হাদিস বর্ণনা করার অনুমতি তিনি দিতেন না।।… হাদিসের শব্দের প্রতি আয়েশা রা. এর আগ্রহের কথা হাদিস মুখস্তকারী সাহাবীগণ জানতেন। এ কারণে কিছু কিছু সাহাবি তাঁর কাছে এসে তাঁকে হাদিস শোনাতেন এবং হাদিসের শব্দ ঠিক আছে কিনা তা দেখে নিতেন। [প্রাগুক্ত, পৃ: ২৭০-২৭১]
[১২] আবু মুসা আশআরী রা. বলেন: হাদিসের ব্যাপারে আমরা কোনো সমস্যায় পড়লে আয়েশা রা. এর কাছে ছুটে যেতাম, এবং জিগ্যেস করে সমাধান জেনে নিতাম।
[১৩] আয়েশা রা. তাঁর মুসনাদে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ব্যক্তিগত আমল সম্পর্কে বহু সংখ্যক হাদিস বর্ণনা করেছেন। অন্যান্য স্ত্রীগণ তাঁর ন্যায় মেধাবী ও জ্ঞানী ছিলেন না। রাসূল হাদিস সংরক্ষণে তাঁর যে ভূমিকা, আর অন্যদের ভূমিকার সাথে তারতম্য করলে বিষয়টি ভালোভাবে বুঝে আসে। [শাইখ আবদুল হামিদ মাহমুদ তাহমায, আয়েশা বিনতে আবু বাকর রা., দ্বীন পাবলিকেশন]
তবে অধমের মতে, বিষয়টির পিছনে মূল ফ্যাক্টর 'বয়স'। বাকি আম্মাজানেরা এতো সংখ্যক হাদিস ও হাদিসের অন্তর্নিহিত ফিকহ মনে রাখার মতো বয়সে ছিলেন না। নবিজির সংস্পর্শে তাঁরা যতদিনে এসেছেন, ততদিনে সেই মানসিক যোগ্যতার বয়স তাঁরা অতিক্রম করে এসেছেন।
[১৪] শাইখ আবদুল হামিদ মাহমুদ তাহমায, আয়েশা বিনতে আবু বাকর রা., দ্বীন পাবলিকেশন, পৃ: ২৬৪
[১৫] মাসরুক রহ. বলেন: আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিশিষ্ট সাহাবিদের দেখেছি, তারা আয়েশা রা. এর কাছে ফারায়েয তথা দীনের মৌলিক বিষয়াদি জিগ্যেস করছেন। [আল-ইজাবাহ]
ইমাম হাকেম তাঁর মুসতাদরাক গ্রন্থে চার ভাগের এক ভাগ বিধি বিধান আয়েশা রা. এর সূত্রে বর্ণনা করেছেন।
[১৬] কাসেম ইবনু মুহাম্মদ ইবনু আবু বকর রহ. বলেন: আবু বাকর, উসমান ও আলী রা.-এর খিলাফতকালে অনেক ফতোয়া আয়েশা রা. দিতেন। লোকেরা তাঁর কাছে সমস্যা নিয়ে এলে তিনি সমাধান দিতেন। মৃত্যু পর্যন্ত তিনি এই কাজে মগ্ন ছিলেন।
আবু সালামা ইবনু আব্দুর রহমান বলেন: আমি এমন কাউকে দেখিনি, যিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদিস সম্পর্কে আয়েশা রা. এর চেয়ে বেশি জানেন। তার চেয়ে বড় ফকীহ (স্কলার) আমি কাউকে দেখিনি। কোনো আয়াত অবতীর্ণের ব্যাপারে তাঁর চেয়ে জ্ঞানী কাউকে দেখিনি। এবং ফরজ তথা দ্বীনের মৌলিক বিষয়াদি সম্পর্কেও। [তবাকাতে ইবনে সা'দ, ২/৩৭৫]
[১৭] মুয়াবিয়া রা. বলেন: আল্লাহর কসম, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পর আয়েশা রা. এর চেয়ে বড় বাগ্মী ও সাহিত্যিক আর কাউকে দেখিনি। [সিয়ারু আলামিন নুবালা সূত্রে প্রাগুক্ত, পৃ: ২৮২]
[১৮] ইবনে আব্দু রাব্বিহ তাঁর পিতা ইবনু আবু মুলাইকা থেকে বর্ণনা করেন, আয়েশা রা. বলেন: লাবীদের উপর আল্লাহ রহম করুন। আমি তাঁর এক হাজার কবিতা মুখস্ত করেছি। হায়! তিনি যদি আমাদের সময়ে থাকতেন। [আল-ইকদুল ফরীদ সূত্রে প্রাগুক্ত, পৃ: ২৮৭]
[১৯] প্রাগুক্ত, পৃ: ২৮৭
[২০] ইবনু আবী মূলায়কা আয়িশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা-কে বললেন, আমরা আপনার কবিত্ব ও বাগ্মীতা দেখে চমৎকৃত হই না। কারণ আপনি আবূ বকর সিদ্দীক রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর কন্যা। আর আবূ বকর সিদ্দীক রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর বাগ্মীতা সর্বজনস্বীকৃত। কিন্তু আপনি চিকিৎসাবিদ্যা কীভাবে শিখেছেন? আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বললেন, নবি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অসুস্থ হয়ে পড়লে বাইরে থেকে আগত প্রতিনিধিদল তাঁর চিকিৎসা করত। আমি সেগুলো মনে রাখতাম। [হাকিম, মুসতাদরাক, ৪র্থ খণ্ড, প্রাগুক্ত, পৃ. ১১]
[২১] সাহাবি উরওয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন, ‘‘আমি উম্মূল মু’মিনীন আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে অন্য কোনো মহিলাকে ইলমে তীব্ব ও অস্ত্রপচার বিদ্যার অতীব পারদর্শী হতে দেখিনি। [মুহাম্মাদ ইবনু সা‘দ, পূর্বোক্ত, পৃ. ৩৭৫]
[২২] ইমাম যুহরী বলেন:
যদি সমস্ত মানুষ ও আম্মাজানদের ইলমকে একত্র করা হয়, তথাপি আয়েশা রা. এর জ্ঞানের পরিধি সকলের চেয়ে অধিক হবে। [মুসতাদরাকে হাকেম ৬৭৩৪]