দীনী এক্টিভিটি করতে গিয়ে নিজেকে ফিতনায় ফেলছে তরুণরা। রেজাল্ট খারাপ করছে। এডমিশন টেস্টে খারাপ করছে। শয়তান এতদিন একভাবে খেলেছে, দীন বুঝে আসার পর এখন খেলে আরেক ভাবে।

প্রথমত, এটা বুঝায় এই দুনিয়া অর্থহীন। অর্থহীন মানে কুরআন-হাদিসে যেমন দুনিয়া ধোঁকা, দুনিয়া তুচ্ছ বলা আছে, তেমনটা না। একেবারে নায়ালিস্টিক অর্থহীন মনে করতে থাকে। মরেই তো যাবো, কী হবে এসব পড়াশোনা, এই টাইপ। কী হবে ভালো রেজাল্ট করে, কী হবে ভালো সাবজেক্টে পড়ে। সব তুচ্ছ দুনিয়া। ছোটোভায়েরা আমার, এটা সম্পূর্ণ শয়তানের ধোঁকা। তুমি ফিতনায় পড়ে গেছো, যদি এমনটা ভাবো।

আমরা সবসময় কাকরাইলের ডাক্তার স্যারদের পরামর্শ মোতাবেক চলতাম। ইন্টার্নি শেষ করার পর ওনাদের ১ম পরামর্শ ছিল, যত দ্রুত সম্ভব ছোট হোক বড় হোক একটা ডিগ্রি করে ফেলো। অনেকে দীনের জন্য কুরবানি করবে, ইত্যাদি জোশের বশে আর পড়াশোনা করে না। পরে শয়তান এসে ধোঁকা দেয়: দেখো তোমার বন্ধুরা কত উপরে চলে গেছে। তোমাকে আর ওরা পাত্তা দেয় না। তুমি তো ওদের চেয়ে ভালো ছাত্র ছিলে। আজ ওরা কোথায়, তুমি কোথায়। মানুষের ঈমান সবসময় একই রকম থাকে না। যখন তুমি দীনের জন্য সবকিছু ফেলে কষ্ট করছো, তখন তোমার যে পরিমাণ ঈমান, আজ থেকে ১০-১৫ বছর পর দুনিয়ার বাস্তবতায় হয়ত এতোখানি থাকবে না। তখন শয়তান এই ধোঁকাগুলো দেবে। ইস, যদি ঐ ক'টা মাস পড়তাম, তবে ভালো সাবজেক্ট পেতাম, ভালো ভার্সিটিতে পড়তাম। হাদিসে এসেছে : 'যদি' শব্দটা শয়তানের কাজের দরজা খুলে দেয়। তাকদিরের উপর অনাস্থা তৈরি করে। যার কারণে দুনিয়ার জীবনে ভালো করা, ভালো ক্যারিয়ার হওয়াটা দীনদারিতার খেলাফ না। এজন্য নিজেকে পরীক্ষার মধ্যে ফেলা যাবে না। মুমিনের গুণ হল, মুমিন সচেতন সতর্ক। শয়তানের জন্য সে কোনো সুযোগ রাখবে না। তখন কুফরি চিন্তা আসার চেয়ে এখন কয়েক মাস দীনী ফিকির বাদ দিয়ে পড়াটা বেশি ভালো না?

দ্বিতীয়ত, শয়তান বুঝায়, এই দুনিয়াবি পড়াশোনা অর্থহীন। হয় আলিম হও, নইলে দীনের কাজে সব ছেড়ে লেগে যাও। এটা আরেকটা ধোঁকা। আলিম হওয়া প্রত্যেকের জন্য জরুরি না। ফরজ পরিমাণ ইলম অর্জন ফরজ। এজন্য দীন শেখা জরুরি, আলেম হওয়াটা না। ফরজে আইন ইলম শিখে আলিমদের সংস্পর্শে থাকাটাই আমাদের জন্য জরুরি। বহু ছেলে নিজের পড়াশোনা রেখে আলিম কোর্সে এনরোল করে। পরে দুটোর কোনোটাই হয় না। জীবনের প্রতিটা বড় বড় সিদ্ধান্ত অবশ্যই ভারি বয়স্ক কোনো আলিমের সাথে পরামর্শ করে নেয়া উচিত। আমাদের জন্য জরুরি হল, আমার নিজের পড়াশোনা ঠিকমতো করা, নিজ ফিল্ডে বেস্ট হওয়া। প্রথমত প্রতিটি সাবজেক্টেই ইসলামের খেদমতের সুযোগ আছে। আমাদের দীন এমন দীন, জীবনের সকল ফিল্ডের সাথে এর সম্পর্ক আছে। একটা উদাহরণ দিলেই তোমরা বুঝবা। সেক্যুলার লেখক (সম্ভবত বাম) মোহাম্মদ আজম স্যার (অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, ঢাবি) রিসার্চ করেছেন, প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা বাংলা ভাষাটাকে বৃটিশ-হিন্দু পণ্ডিতরা মিলে প্রমিত বাংলা বানিয়েছে। জোর করে আরবি-ফার্সি শব্দ ঝেঁটিয়ে সেখানে সংস্কৃত শব্দ ঢুকিয়েছে। এভাবে কলকাতা হয়েছে বাঙালিত্বের কেবলা। এই রিসার্চটা আমরা ইসলামপন্থী এক্টিভিস্টরা খুব ব্যবহার করছি। তার মানে বাংলা পড়ে দীনের কাজ করা যায়। আজম স্যার একজন ইসলামপন্থী হলে আমরা আরও অজানা চক্রান্ত হয়ত জানতাম। সুতরাং নিজের সাবজেক্টে এক্সপার্ট হওয়াটাও দীনের কাজ।

মুমিনের সবকিছু দীনের কাজ, যদি সঠিক নিয়তে করা হয়। শুধু নিয়ত ঠিক রাখো, যেখানে তুমি গিয়ে পৌঁছবে, সেখানে দীনের দাওয়াহ করবে। সেখানে তোমার সারাউন্ডিংস কীভাবে দীনের উপর উঠতে পারে, সে চেষ্টা হাতে নেবে। আর অর্থ বেশি কামানোটাও দীনী মেজাজের বিরুদ্ধে না। কামাবে প্রচুর, প্রচুর প্রোডাক্টিভ হবো, কিন্তু ভোগ করবো কম, দান করব বেশি। দীনী প্রকল্পে দান করবে প্রচুর। তাহলেই আর কোনো সমস্যা নাই। আবদুর রহমান ইবনে আওফ রা., উসমান রা. এনারা সহ অধিকাংশ সাহাবীই ইসলামের বিজয়ের যুগে প্রচুর ধনী ছিলেন। কিন্তু তাঁরা আখিরাতের জন্য দান করে দিতেন। আয় খারাপ জিনিস না।

নানান দীনী গ্রুপে এডমিন হয়ে কাজ করছো অনেকে। রেজাল্ট খারাপ করো না। বাবা-মা, আত্মীয় স্বজন তাহলে কিন্তু নেগেটিভ দাওয়াহ পাবে। বলবে, ছেলেটা কত ব্রিলিয়ান্ট ছিল। হুজুর হয়ে নষ্ট হয়ে গেল। আর তুমি ভালো করলে এক তো, শয়তানকে ধোঁকা দেবার সুযোগ দিলে না। আর দুই, উদাহরণ হবে জুনিয়রদের জন্য। দেখ, অমুক কত ভালো, নামায-কালাম পড়ে, এবাদত করে, কত ভালো রেজাল্ট করে। তোমার পড়া-রেজাল্ট-ভালো জায়গায় চান্স পাওয়া এগুলো সব দীনের দাওয়াহ। হুঁশিয়ার... মনে রেখো আমার কথাগুলো। নিজেকে পরীক্ষায় ফেলো না। যাদের এডমিশন সামনে, এক্টিভিটি বাদ দিয়ে পড়ো। আল্লাহর জন্য পড়ো। আল্লাহ বরকত দিন তোমাদের প্রচেষ্টায়।

অনেকে ভাবছে পোস্টে ইলম চর্চাকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। মোটেই তা নয়। ইলম চর্চারও একটা সময় আছে। সেটা কখনোই এডমিশনের ঠিক আগে আগে নয়, নিজেকে পরীক্ষায় ফেলে নয়। এডমিশনের পর অঢেল সময় পাওয়া যায় ভার্সিটির দীর্ঘসূত্রী কারিকুলামের সুবাদে। এবং আমি প্রত্যেক ভার্সিটি স্টুডেন্টকে রিকমেন্ড করব: ১ম বর্ষে ঢোকার সাথে সাথে অনলাইনে যেকোনো 'ফরজে আইন' কোর্সে (১ বছর, ২ বছর মেয়াদী কোনো ডিপ্লোমা, ৩ বছর মেয়াদী যেমন IOM) কোর্সে ভর্তি হয়ে যেতে। এসব কোর্সে পাশ করাও জরুরি না। কেবল কোর্সগুলো করাই জরুরি। অনার্স শেষ হতে হতে দীন কোর্সও শেষ হয়ে যাবে। কিংবা আলাদা আলাদা আকীদা কোর্স, তাজবীদ কোর্স, আরবি ভাষা কোর্স, প্রয়োজনীয় ফিকহ কোর্স। আলহামদুলিল্লাহ, স্বপ্নপিয়াসী তরুণ আলিমগণ আমাদের জন্য ইলমের অনেক সুযোগ অনলাইনে তৈরি করেছেন। ইলম চর্চা অবশ্যই জরুরি, তবে মওলানা হওয়া আমাদের জন্য জরুরি না। এটা বলতে চেয়েছিলাম। বরং বেশি জরুরি নিজ নিজ সাবজেক্টে দক্ষতা অর্জন করা। কাশ্মীরে চিল্লা দেয়া এক ইন্ডিয়ান সাথীর কাছে শুনেছি, শহীদ বুরহান ওয়ানি কাশ্মীরে কোনো শহরে যখন ঢুকতেন, কারেন্ট-মোবাইল নেটওয়ার্ক সব অকেজো করে দিয়ে ঢুকতেন। সেলিম শেহজাদের 'আরব্য রজনীর নতুন অধ্যায়' বইয়ে আমরা দেখেছি মেজর হারুন সহ অন্যান্য প্রকৌশলীদের নিজ নিজ সেক্টরে (বিশেষত আইটি) দক্ষতা কীভাবে গ্লোবাল আন্দোলনে কাজে লেগেছে। সুতরাং নিজ সাবজেক্টে বেস্ট হওয়া দীনের জন্যও জরুরি।

আমাদের কাজ জ্ঞান তৈরি করা। ইসলামের পক্ষে। পৃথিবীতে নিরপেক্ষ বলে কিছু নেই। জ্ঞানও নিরপেক্ষ না। একাডেমিক হয়ে জ্ঞান তৈরি করো। এক্টিভিস্টরা সেই জ্ঞান ব্যবহার করবে ইসলামের জন্য। পাশ্চাত্য সভ্যতার বয়ানের প্রতিবয়ান নির্মাণ করতে হবে, যা ছড়িয়ে দিতে হবে হীনম্মন্য মুসলিমদের কাছে। তারা নিজের পরিচয় ফিরে পাবে। আপাতত এটা চলবে। এটাও ইদাদ। আল্লাহ সুযোগ দিলে পরের ধাপও নসীব হবে। ততদিন আনপ্রোডাক্টিভ থাকা চলবে না। দাঈ হিসেবে সফল হতে হবে। তোমার পার্থিব সফলতাটাও দুনিয়ায় বুঁদ হয়ে থাকা জম্বিদের জন্য দাওয়াহ। (এই প্যারাটা আরও ক্লিয়ার হবে সামনের পোস্টে) তবে নিজে জম্বি হওয়া থেকে বাঁচতে হলে লাগবে ইলম আর আলিমদের সোহবত। একজন বয়স্ক আলিমকে নিজের জীবনের অংশ বানিয়ে নাও, বড় বড় সিদ্ধান্তগুলো তাকে জানিয়ে নাও। কী করছো, কী পরিকল্পনা এসব তাকে মাঝে মাঝে জানাও। পথ হারাবে না ইনশাআল্লাহ। অনেকে বিসিএস ও মেয়েদের ক্ষেত্রে আমার মত জানতে চাচ্ছেন। প্রথমত পোস্টে আলাপ জেনারেলাইজড। আপনার প্রশ্ন স্পেসিফিক। সুতরাং একজন ভারী বয়েসী আলিমের সাথে বসে তাঁর পরামর্শ মোতাবেক চলুন। ইনশাআল্লাহ ওটাই দীন হবে। আল্লাহ দয়াময় আপনাকে পাকড়াও থেকে অব্যহতি দিবেন ও কাজে বরকত দিবেন, আশা হয়।

আমি আপনাদের একটা কেইস সিনারিও দিই। আমার কাছে পরামর্শ চেয়েছিল তার নিকটজন। ভার্সিটি ২য় বর্ষে গিয়ে একটা মেয়ে দীনের বুঝ পেল। তার পুরো পরিবারে দীনের সামগ্রিকতা বুঝার কেউ নেই। তার মা কর্মজীবী নারী, বোন-বোনাই ইউরোপ-প্রবাসী, মামারা সবাই কাঠ-সেক্যুলার। পারিবারিক সিদ্ধান্তগুলো বড়মামা নেন, যিনি স্টীল-সেক্যুলার। তো, এই মেয়ে মাকে জানালো সে সহশিক্ষায় পড়বে না, সহশিক্ষা নাজায়েয। মেয়েকে 'কর্মজীবী মা' বাসা থেকে বের করে দিল। খালার বাসায় কয়েকদিন থেকে এসে মা-কে জানাল, পড়াশোনা করবে, কিন্তু চাকরি করবে না। এই নিয়ে মায়ের সাথে, বোন-বোনাইয়ের সাথে রেগুলার ঝগড়াঝাটি, ঘর থেকে বের করে দেয়াদেয়ি। বান্ধবীর স্বামীদের মাধ্যমে এদিক ওদিকে বিয়ের চেষ্টা। এমন প্রবলেম্যাটিক জায়গায় পাত্র পাওয়া কঠিন। পাত্র রাজি হলেও পাত্রের মা-বাপ এমন জায়গায় সম্বন্ধ করতে চায় না। শেষমেশ মেয়েটির বাড়িতে সালিশ বসল, মামারা সবাই এলো। মেয়েটি বলল, আমাকে আমার পছন্দমত একটা ছেলের সাথে বিয়ে দিয়ে দাও। মামারা বলল: না, আমাদের পছন্দমত সেক্যুলার ছেলের সাথেই তোমাকে বিয়ে দেব। জ.ঙ্গি.রা তোমার মাথা খেয়েছে, কাদের সাথে তুমি চল তাদেরকে আমরা ধরব...থানায় কেইস করব... ইত্যাদি নানা প্রেসারে শেষমেশ মেয়েটি বলতে বাধ্য হল: আমি আর পর্দা করব না, দীন আগের মত পালন করব না। সহশিক্ষায় পড়ব, চাকরিও করব। তোমাদের পছন্দের ছেলেকেই বিয়ে করবো। ইত্যাদি। আগে তাও আপাদমস্তক পর্দা করে সেক্যুলার ভার্সিটিতে পড়তো, দীনী বোনদের সাথে ওঠাবসা করত, হয়ত অনলাইনে ইলমে দিকে এগোনোর সুযোগ ছিল, দীনদার ছেলেকে বিয়ের সুযোগ... সবই পেত যদি মুখটা বন্ধ রাখতো। হুট করে সিদ্ধান্ত না নিত। এখন প্রতিবাদী হয়ে নিজেকে নিজে পরীক্ষার মধ্যে ফেলে দিল। দীনের মৌলিক বিধিবিধান মানাই হয়ে গেল কঠিন। ফরজই এখন আর মানতে পারছে না, মাহরাম মেনেও চলতে পারছে না। (যার সুযোগ আছে, তার কথা ভিন্ন)

আসলে দীনের মেজাজ, দীনের বিধান এগুলো আমরা হুবহু তুলে ধরব, দাওয়াহ করব। এটার উপর ধাপে ধাপে উঠার চেষ্টা করবো। আমাদের আলিমরা কেন সরাসরি হাদিস পড়েই সিদ্ধান্ত নিতে নিষেধ করেন। সরাসরি কেউ ফিকহের কিতাব নকল করলেই সেটা মানতে বলেন না। বলেন, আলিমের 'কাছে' যেতে। কারণ হল, প্রত্যেকের সমস্যার কিছু নিজস্ব এঙ্গেল থাকে। অনেকে ইসলামকিউএ-র ফতোয়া লিংক দিচ্ছেন। এটা আমাদের টার্গেট। কিন্তু টার্গেটে পৌঁছোনোর পদ্ধতি সকলের এক হবে না। কীভাবে 'সহশিক্ষা নাজায়েয' এই আমলে আপনি পৌঁছোবেন, সেটা আলিম সাক্ষাতে আপনাকে বলবেন। এবং সেটা একেকজনের একেকরকম হতে পারে। আপনি নিজের পুরো সমস্যাটা তাঁকে জানাবেন, আপনার সমস্যার একান্ত নিজস্ব এঙ্গেলগুলোও তাঁকে বুঝাবেন। তিনি সামগ্রিকতা বিবেচনা করে আপনার জন্য শুধু আপনার জন্য পার্সোনালাইজড একটা ওয়ে বের করে দিবেন (অন্য কেউ আবার একই ফতোয়ায় আমল করলে হবে না, তার আর আপনার সমস্যা হুবহু একই না)। এভাবে ধাপে ধাপে আপনি 'সহশিক্ষা নাজায়েয' এর উপরে উঠবেন। এজন্য আলিমদের সাথে ব্যক্তিগত সম্পর্ক রাখার জরুরত।

অধিকাংশ আমাদের পরিবারের অবস্থা এমনই। আমরা শুধু চাপিয়ে দিতে চাই। ওয়ার্ক করতে চাই না। পরিবারের উপর ওয়ার্ক করতে চাই না। মেয়েটা বছরখানেক পরিবারের উপর দীনের মেহনত করতে পারতো। ঘরে তালিম, মা-বোনের সাথে দীনী আলাপ, দীনী মজলিসে নিয়ে যাওয়া, কিতাবপত্র। নানা কৌশল শেষে সময় নিয়ে বছরখানেক পরে, বা আরও পরে এপ্রোচগুলো নেয়া যেত। অনেক কিছুই করা যেত, যা পরামর্শে একজন আলিম তাকে বলতেন। ইন দয় মীনটাইম দুআ কান্নাকাটি ইস্তিগফার, আল্লাহর আরও কাছে নিয়ে যেত তাকে।

মনে রাখবেন, বাংলাদেশে আমরাই ১ম জেনারেশন, যারা ইসলামকে একটা 'দীন'/ ওয়ার্ল্ডভিউ হিসেবে বুঝছি। আমাদের বাবা-মায়ের জেনারেশন মজলুমের অধিকার, বিপ্লব, হক-সত্য, আদর্শ এসব বলতে বুঝতো 'কমিউনিজম'কে। সুতরাং তাঁদের আর আমাদের 'ইসলাম' বুঝার ক্ষেত্রে গ্যাপ আছে। আল্লাহ না করুন, আমার জোরাজুরির কারণে তাদের মুখ দিয়ে কুফরী কথা বেরিয়ে গেল ধরেন।

আমাদেরকে দাওয়াহ, দীন পালন, সাংগঠনিক ওয়ার্ক, জীবন গঠন ইত্যাদি সকল বিষয়ে আরেকটু কৌশলী হতে হবে। আল্লাহ আমাদের গুনাহ ছাড়ার প্রচেষ্টা, আন্তরিকতা, ক্ষমা চাওয়া দেখেন। আমলের কমতি থাকবে, ইস্তিগফার থাকবে, দুআ-কান্নাকাটি, তৌফিক চাওয়া থাকবে। কিন্তু এমন পরিস্থিতিতে স্বেচ্ছায় ফেলা ঠিক হবে না, যা বহন করার ক্ষমতা আমার নেই। নিজে আয় করা শিখলে আপনি যে সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন, সে সিদ্ধান্ত আপনি বাপের খেয়েপরে বাপের সাথে যুদ্ধ করে নিতে পারেন না। এটাকেই আমি বলছি নিজেকে পরীক্ষায় ফেলা।

সবচেয়ে বড় কাজ এখন দাওয়াহ। মানুষের চিন্তার মাঝে মেরুকরণ ঘটানো। চিন্তা করতে অনিচ্ছুক মানুষকে চিন্তা করতে বাধ্য করা। শাপলা আমাকে বাধ্য করেছিল চিন্তা করতে। বর্তমান বিশ্বব্যবস্থা নিয়ে সকলের অন্তরে প্রশ্ন জাগানো। এজন্য আমরা সমাজ থেকে আইসোলেট হয়ে গেলে চলবে কীভাবে। বরং যে যেখানে আছেন, সেখানকার মানুষের মাঝে চিন্তাগত মেরুকরণ ঘটাতে হবে। দীনের প্রশ্নে কাউকে উদাসীন বা নিরপেক্ষ থাকতে দেয়া চলবে না।

আমি সেক্যুলারদের (দীন নিয়ে অসচেতন মাত্রই সেক্যুলার) হাতে সবকিছু ছেড়ে না দিয়ে, তাদের সাথে প্রতিটি ইন্টার্যাকশনের সুযোগ আমি নেবার পক্ষে। ইন্টার্যাকশন না হলে মেরুকরণ সম্ভব না। স্কুল-কলেজ-হাসপাতাল-মাঠ-রাজপথ-হাট-বাজার-একাডেমিয়া। এসব জায়গায় যে ফিতনা রয়েছে, তা তো অস্বীকারের সুযোগ নেই। এজন্যই আলিমদের সাথে ব্যক্তিগত পরামর্শ। সিস্টেম বদলানোর নামে শুধুমাত্র ইমাম মাহদীর আগমনের অপেক্ষা করতে আমি রাজি না। সিস্টেম বদলানোর কাজটা বিভিন্ন লেভেলে করতে হবে, এই বিভিন্ন লেভেলে আমাদের ঢুকতে হবে। 'শেষ ধাপ' কিতাল-কে ১ম ধাপ মনে করে অলস অক্ষম অপেক্ষা করার পক্ষে আমি না। আল্লাহ আমাকে মাফ করুন।

বিঃদ্রঃ
বোনদের জন্য এই পোস্ট ও আগের দুটো পোস্ট না। নারী ও পুরুষের কর্মক্ষেত্র ইসলামে ভিন্ন। ইসলামের এই কর্মবণ্টন মানা ওয়াজিব (মাআরেফুল কুরআন)। ভাইদেরকে যেমন বলছি ভাইদের ফিল্ডে বেস্ট হতে দীনের প্রয়োজনে। বোনদেরকে বলবো বোনদের ফিল্ডে বেস্ট হতে, দীনের প্রয়োজনে। আমার পোস্ট কোনোভাবেই বোনদের জন্য সহশিক্ষাকে জায়েয করে না। কীভাবে এই নাজায়েয থেকে ফিরবেন সে পদ্ধতিটা নিজ পরিবারের অবস্থা সাপেক্ষে হতে হবে। এজন্য আলিমের পরামর্শ হল সিঁড়ি।

বাইরের জগত পুরুষের জন্য। পুরুষের শারীরতত্ত্ব-মনস্তত্ত্ব সব বাইরের স্ট্রেস নেবার জন্যই তৈরি। বোনদের সেটা না। বিল্ট-ইন কিছু পার্থক্য দিয়ে দেয়া আছে। বোনদের কৃত্রিমভাবে সে জগতে প্রবেশ করানো হয়েছে। প্রতিযোগিতায় বাধ্য করা হয়েছে। যার খেসারত মেয়েরা দিচ্ছে শরীর-মন ধ্বংস করে। সহশিক্ষা শুরু হয়েছে মেয়েদের প্রবেশ দিয়ে। এজন্য সহশিক্ষা তো উভয়ের জন্যই নাজায়েয, এই প্রশ্নটা অবান্তর।