বিজ্ঞানের ইতিহাস, সমাজবিদ্যার ইতিহাস, ইতিহাসের ইতিহাস, অর্থনীতির ইতিহাস ও রাজনীতির ইতিহাস একসাথে পড়ার চেষ্টা করুন। কোরিলেট করার চেষ্টা করুন। অনেককিছু ধরা পড়বে চোখে। যেখানে [ক] পাবেন তার সাথে আগের [ক] মিলিয়ে দেখবেন। [খ] এর সাথে আগের [খ] মিলাতে হবে।

বিগত শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত বিয়ে ব্যাপারটা মাঝবয়েসে এসে ঠেকেনি। ১৯৬০ সালেও মেয়েদের ১ম বিয়ের গড় বয়স ছিল ২০.৩ আর পুরুষের ২২.৮ বছর। আর ২০১০ সালে এসে মেয়েদের ২৫.৮ আর ছেলেদের ২৮.৩ বছর। [1] মোটামুটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী পশ্চিমা বিশ্বে এবং গত শতকের শেষ চতুর্থাংশে এশিয়ায় বিয়ে পেছানোর হিড়িক ওঠে। বিষয়গুলো একটু বুঝার আছে। এর কারণ হল,

  • দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী আগ্রাসী বিশ্বব্যবস্থা হিসেবে পুঁজিবাদের উত্থান,
  • সমাজতন্ত্রের সাথে প্রতিযোগিতায় প্রভাব বিস্তার
  • বর্তমানে পুঁজিবাদী বিশ্বব্যবস্থার একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ।

২য় বিশ্বযুদ্ধের পর বিশ্ব দুই মেরুতে ভাগ হয়ে যায়। আমেরিকার নেতৃত্বে পুঁজিবাদী ব্লক, সোভিয়েত রাশিয়ার নেতৃত্বে সমাজতান্ত্রিক ব্লক। অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয় এই দুই বিশ্বব্যবস্থা, যাকে আমরা স্নায়ুযুদ্ধ নামে চিনি। মহাকাশ বিজয়াভিযান থেকে নিয়ে জলে-স্থলে আধিপত্য বিস্তার, কোনোখানেই বাকি নেই। পরস্পরকে অর্থনৈতিকভাবে টেক্কা দেয়ার প্রচেষ্টাও থেমে নেই। ১ম বিশ্বযুদ্ধের সময়েই বুঝা গিয়েছিল নারীদেরকে কারখানায় আনার লাভটা। পুরুষদের যেতে হয়েছিল যুদ্ধে। যুদ্ধের সময়ে এবং যুদ্ধের পরেও কারখানাগুলোতে নারীকর্মী ছিল প্রচুর, কেননা পুরুষ নিহত-নিখোঁজ ছিল বহু। সেসময়কার ৩ টি পোস্টার দেখলেই বুঝবেন, নারীদেরকে কারখানামুখী করবার ব্যাপক প্রোপাগান্ডা। একটি বিখ্যাত পোস্টার "We Can Do It!", ১৯৪৩ সালে বানিয়েছিলেন J. Howard Miller নারী কর্মীদের উৎসাহ ধরে রাখার জন্য। আরেকটা বিখ্যাত ক্যারেক্টার তৈরি করা হয়েছিল যার নাম Rosie the Riveter, আমেরিকায় অস্ত্র ও সামরিক ফ্যাক্টরি এবং অন্যান্য কারখানায় কর্মরত নারীদের গ্লোরিফাই করে একটা সাংস্কৃতিক আন্দোলন গড়ে তোলা হয়েছিল, যাতে নারীরা ব্যাপকভাবে এসবে অংশ নেয়। (ছবিগুলোর লেখাগুলো পড়বেন)

<image>

মজা পেয়ে গেল মালিকেরা, নারীদের শ্রমবাজারে রাখাটা পুঁজিপতিদের ব্যাপক লাভজনক সাব্যস্ত হল।

  • এক, বেতন কম দিতে হত। যার প্রেক্ষিতে ১৯৬৩ সালে করতে হয়েছিল ‘সমান বেতন আইন’। [খ]
  • দুই, চাকুরির প্রতিযোগিতা সৃষ্টি হয়। মেয়েদের জন্য চাকরি অপশনাল, আর পুরুষের তো ‘না হলেই নয়’। ফলে, পুরুষরা আগের চেয়ে কম বেতনেও শ্রম দিতে তৈরি থাকে। [গ]

পুঁজিপতিরা তো এটাই চায়। বেতন কম দিলে পুঁজিপতির পকেটে মুনাফা থাকবে বেশি। তাহলে নারীদের এখন শ্রমবাজারে ধরে রাখতে হবে যেকোনো মূল্যে। আর নারীদের শ্রম ধরে রাখতে হলে করতে হবে ৩টা কাজ—

  • পরিবার গঠন-কে পেছাতে হবে স্বাবলম্বী হবার নামে।নারীদেরকে পরিবারমুখী থেকে ক্যারিয়ারমুখী করতে হবে। [ঘ] চাকরি, ক্যারিয়ার— এসবকে মর্যাদার কাজ হিসেবে বুঝাতে হবে।
  • ‘আগে আগে বিয়ে’-কে ভিলেন বানাতে হবে। [ঙ]
  • বিয়ে, গর্ভধারণ, বাচ্চাপালন-কে ছোট, ঘৃণ্য কাজ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। যেন এগুলো করতে নারী অনীহা বোধ করে। [চ]

<image>

সমাজতন্ত্রের সাথে প্রতিযোগিতার ময়দানে আবার ফিরিয়ে আনা হল ‘নারীবাদী আন্দোলন’কে। আগের ঊনবিংশ শতক জুড়ে চলা নারীবাদী আন্দোলনের প্রথম ওয়েভের আপাত সমাপ্তি ঘটেছিল আমেরিকার নারীদের ভোটাধিকার দেবার মাধ্যমে সেই ১৯২০ সালে। ৬০-এর দশকে আবার চাঙা করে তোলা হল ৪০ বছর আগের সেই হাইপ। সমাজতন্ত্রও একই কৌশল নিতে দেরী করল না। আসলে সমাজতন্ত্রও একধরনের ‘রাষ্ট্রীয় পুঁজিবাদ’ ছাড়া আর কী? পার্থক্য কেবল ওখানে পুঁজি হল পুঁজিপতিদের হাতে; আর এখানে পুঁজি কমিউনিস্ট পার্টির হাতে। ২য় বিশ্বযুদ্ধের পরপরই ১৯৪৯ সালে Simone de Beauvoir-এর ‘Second Sex’ ব্যাপক সাড়া ফেলল। ১৯৬৩ সালে Betty Friedan-এর ‘The Feminine Mystique’ প্রকাশিত হয়। ৩ বছরে বিক্রি হয় ৩০ লক্ষ কপি। বইয়ের বিষয়বস্তু ছিল: সন্তানপালন ও ঘরোয়া কাজকাম নারীকে হতাশ ও অসুখী করে তুলেছে, এটা। আইডিয়াটা নতুন না হলেও, ৩০ লক্ষ নারী পাঠকের কাছে আওয়াজটা পৌঁছে গেল। বিপুল সংখ্যক মধ্যবিত্ত শ্বেতাঙ্গ নারী হঠাৎ করে আবিষ্কার করলেন, তারা আসলে অসুখী। গড়ে উঠল আন্দোলন। এবার ফোকাস আর রাজনৈতিক সমতা না, সামাজিক সমতা। দাবিগুলো ছিল যৌনতা ও সম্পর্ক, গর্ভপাতের অধিকার, ঘরোয়া কাজ— এই কেন্দ্রিক। অর্জনগুলো দেখলেই বুঝবেন কী নিয়ে আন্দোলন চলছিল—

  • সমান বেতন আইন, ১৯৬৩: মানে এর আগে সমান বেতন দেয়া হচ্ছিল না, আগেই বললাম। [খ]
  • বিবাহিতা ও অবিবাহিতাদের জন্য সুপ্রীম কোর্টকর্তৃক জন্মনিয়ন্ত্রণের অনুমোদন [চ]
  • শিক্ষার সমানাধিকার: (টাইটেল ৯) আর্লি বিয়েশাদীর কফিনে শেষ পেরেক। [ঙ]
  • ১৯৭৩ সালে Roe vs Wade কেস দ্বারা নারীর প্রজননের স্বাধীনতা অর্জন [চ]

১৯৬০ এর দশকের শুরুতে আরম্ভ হয়ে ১৯৮০ এর দশকের শেষ অব্দি ছিল সেকেন্ড ওয়েভের সময়কাল। সেকেন্ড ওয়েভের চূড়ান্ত পর্যায়ে আন্দোলন কিছুটা উগ্রতায় পরিণত হয়, এবং সমাজে নারীবাদের প্রতি বিতৃষ্ণা তৈরি করে। নিজেদেরকে শারীরিকভাবেও পুরুষের সমকক্ষ দাবি করার ও নারীসুলভ বৈশিষ্ট্য প্রত্যাখ্যানের একটা মেসেজ উঠে আসে। ১৯৬৮ সালে ‘মিস আমেরিকা’ যেখানে অনুষ্ঠিত হচ্ছিল সেখানে নারীবাদীরা জমায়েত হয়, এবং ব্রা পুড়িয়ে প্রতিবাদ করে। পুরুষের চোখে যা যা নারীর প্রতীক সেগুলো পরিত্যাগ করার একটা নমুনা।১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের মধ্য দিয়ে স্নায়ুযুদ্ধের অবসান ঘটে। একক সফল বিশ্বব্যবস্থা হিসেবে ‘আমেরিকার নেতৃত্বে পুঁজিবাদ’ বিজয়ী হয়। নারীবাদ হয়ে গেল পুঁজিবাদের লাভজনক প্রোজেক্ট। নারীবাদের পালে সব ধরনের ফুঁ এখন পুঁজিবাদই দেয়। [2] Cambridge University-র gender studies-এর প্রোফেসর Nancy Fraser লেখেন—

পুরুষ জীবিকা উপার্জন করবে, নারী ঘর সামলাবে— এই পরিবার কাঠামো (male breadwinner-female homemaker family) ছিল রাষ্ট্রায়ত্ত পুঁজিবাদের কেন্দ্রবিন্দু। নারীবাদের নামে আমরা এই কাঠামোটার সমালোচনা করেছিলাম। এই সমালোচনা এখন কাজে লাগাচ্ছে কর্পোরেট বেসরকারী পুঁজিবাদ (flexible capitalism)। কেননা বেসরকারি পুঁজিবাদ নির্ভরই করে নারীর শ্রমের উপর, বিশেষ করে সেবা ও শিল্প খাতে নারীর কমমূল্যের শ্রমের উপর। এই শ্রম কেবল তরুণী অবিবাহিতারা দেয় তা না, বরং বিবাহিতা ও মায়েরাও দিচ্ছে। কেবল কট্টর নারীবাদীরাই দেয় তা না, বরং সব জাতির মেয়েরাই দিয়ে চলেছে। সারা দুনিয়াতেই যেহেতু মেয়েরা শ্রমবাজারে বানের মত আসছে, আগের সেই পরিবার কাঠামো বদলে হয়েছে, ‘দুই রোজগেরে’ পরিবার (two-earner family), নারীবাদের কারণে। [3]

How feminism became capitalism's handmaiden - and how to reclaim it, Nancy Fraser

এর ফলে পশ্চিমের গণমানসিকতার পরিবর্তন ঘটল। এখন যা ঘটল—

  1. পুঁজিবাদ মানুষকে ভোগবাদী বানিয়ে নিয়েছে, নাহলে তার পণ্য ভোগ করবে কে? ফলে পুঁজিপতিদের তৈরি নিত্যনতুন পণ্যের দরকার পড়ছে জীবন উপভোগের জন্য। এইসব নতুন নতুন চাহিদা নিয়ে ব্যবসা হচ্ছে। [ঘ]
  2. ভোগবাদী মানুষ ভোগের সামর্থ্য অর্জনকেই জীবনের লক্ষ্য হিসেবে নিয়েছে। ক্যারিয়ার নারী-পুরুষ সকলের মা’বুদ। টেস্টোস্টেরোন-বিধৌত যৌবন ভোগে কাটিয়ে ‘বিয়ে’ এখন মধ্যবয়সের (৩৫-৪০) চিন্তা। [ঘ]
  3. নারী-পুরুষ উভয়েই এখন পুঁজিবাদের বাজার, উভয়েই ক্রেতা। ফলে বিয়েটা এখন পারস্পরিক নির্ভরশীলতা নয়, দৈহিক প্রয়োজন নয়। বিয়ে এখন জাস্ট পার্টনারশীপ আর শেষ বয়সের সঙ্গী খোঁজা। ফলে যত দেরিতে করা যায়। যত ভোগ করে ও ভোগের সামর্থ্য অর্জনের পর বিয়ে করা যায় তত ভালো। [ঘ]
  4. আমেরিকায় ডিভোর্স বেশ ব্যয়বহুল ও সময়সাপেক্ষ। গড়ে একটা ডিভোর্সে খরচা হয় ১৫০০০ ডলার। [4] যা বাড়তে পারে রাজ্যভেদে; উকিল খরচ, সন্তান আছে কি না, যৌথ প্রোপার্টি আছে কি না, কতদিন লাগছে নিষ্পত্তি হতে— এসব মিলিয়ে। বিয়ের চাহিদা যদি ভিন্নভাবে মেটে, কী দরকার এসব হ্যাপা-র?
  5. লিভটুগেদার তাদের সমাজে একটা অনুমোদিত কালচার। সারাজীবন বিয়ে না করলেই কী যায় আসে। বিকল্প তো আছেই। বিয়ে মানে তো বাধ্যবাধকতা, আর লিভ-টুগেদারে ওসব ঝামেলা নেই। [ক] ১৯৭০ সালে আমেরিকায় এ ধরনের পরিবারের সংখ্যা গিয়ে দাঁড়ালো ৫ লাখ, ২০০২ এসে সেটা হলো ৪৯ লাখ [5]
  6. নারীবাদের সুবাদে বিয়ে, সন্তানধারণ এসব পশ্চিমের মেয়েদের কাছে ঝামেলা। ক্যারিয়ারের শত্রু এগুলো। [চ]
  7. সন্তান নিলেও বিয়ে না করেই তো নেয়া যায়। পশ্চিমা বিশ্বে জন্মানো অর্ধেক শিশু ‘বিয়ে ছাড়া’। [ক]

এবার একটা রিসার্চ দেখাই। যদিও বেশ পুরনো, ২০১৩ সালের। University of Virginia-র আন্ডারে National Marriage Project এর একটা ক্যাম্পেইন হয়—‘National Campaign to Prevent Teen and Unplanned Pregnancy’. তারা একটা রিপোর্ট করে ‘Knot Yet: The Benefits and Costs of Delayed Marriage in America’- নামে। রিপোর্টের সারাংশ হল:

  • ২৫ বছর বয়সে, ৪৪% নারীর প্রথম সন্তান হয়। কিন্তু ২৫ বছর বয়সে প্রথম বিয়ে করে ৩৮% নারী। [ক]
  • প্রথম শিশুদের ৪৮% হল কুমারী মায়ের সন্তান। [ক]
  • কুমারী মায়েদের ২৩% টিনেজার। ৬০% এর বয়েস ২০-এর ঘরে।
  • যেসব নারীরা ৩০ বছর বয়স অব্দি বিয়ে না করে থাকে তারা বছরে $18,152 (ভার্সিটি-পাশ) $4,052 (কলেজ-পাশ) বেশি আয় করে। ২০-এর আগে যারা বিয়ে করেছে তাদের চেয়ে। [ঘ]
  • ৩০ এর ঘরে বয়সী ছেলেদের মধ্যে যারা ২০-এর ঘরে বিয়ে করেছিল, নিজ শিক্ষাগত যোগ্যতা অনুপাতে তাদের ব্যক্তিগত ইনকাম সর্বোচ্চ। মধ্য ৩০-এও যারা বিয়ে করেনি তাদের ইনকাম সর্বনিম্ন, এমনকি যারা ২০-এর আগে বিয়ে করেছে, তাদের চেয়েও কম।
  • চমকপ্রদ একটা ফল এসেছে— আগের যুগে যে বয়সে তরুণ-তরুণীরা বিয়ে করত, ঠিক একই বয়সে এখন তারা প্রথম লিভ-টুগেদারে (first coresidential relationship) প্রবেশ করছে। পার্থক্য এটাই যে, আগে বিয়ে করত, এখন বিয়ে করে না। আগে দায়িত্ব নিত, এখন নেয় না। [ক]
  • সন্তান আছে এবং ২০-এর ঘরে বয়স, এমন লিভ-টুগেদার দম্পতির ৪০% সন্তানের বয়স ৫ হবার আগেই ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। যা বিবাহিত দম্পতির চেয়ে ৩ গুণ বেশি। [ক]
  • শুধু ভার্সিটি-পাশ নারীই দেরিতে বিয়ে করছে তাই না। ওয়েটারের চাকরি করে এমন নারীরাও ৩০ এর আশেপাশে বিয়ে বসে। [ঘ]

পশ্চিমের কালচারটাই এখন এমন, যে বিয়ে-কে তারা দেখে গাঁথনির শেষ ইট (capstone) হিসেবে, ভিতের ইট (cornerstone) হিসেবে না। প্রাপ্তবয়স্ক জীবনের শুরু হিসেবে না, বরং সব কাজ সেরে শেষ কাজ হিসেবে বিয়েকে রাখে।

  • ৯১% তরুণ-তরুণী ভাবে, সম্পূর্ণ আর্থিকভাবে স্বাধীন না হয়ে বিয়ে করা যাবে না।
  • ৯০% মনে করে শিক্ষাজীবন শেষ না করে বিয়ে করা যাবে না।
  • ৫১% মনে করে ‘ক্যারিয়ার অবশ্যই আগে’। তারা ভাবে ১/২ বছর ফুলটাইম চাকরি করে বিয়ের প্রস্তুতি নিতে হবে। [ঘ]

সামাজিক পলিসি নিয়ে রিসার্চ করে এমন একটি থিংক-ট্যাঙ্ক Urban Institute এর একজন রিসার্চার Robert Lerman ও তাঁর সহকর্মী Avner Ahituv পেয়েছেন যে, বিয়ে একজন পুরুষের আয়কে ২০% বাড়ায়। ২০-২৮ বছর বয়েসী বিবাহিত লোকেরা জীবন নিয়ে "highly satisfied" হবার সম্ভাবনা বেশি। Authentic Happiness বইয়ে পেনসিলভ্যানিয়া ইউনিভার্সিটির মনোবিজ্ঞানের প্রোফেসর Martin E. P. Seligman, Ph.D বলেন:

বহু রিসার্চ দেখিয়েছে যে, একটা ভালো চাকরি পাবার চেয়ে বিয়ে করা-টা বেশি সুখ নিশ্চিত করে।

University of Virginia-র সমাজবিদ Brad Wilcox এই রিসার্চের co-author. National Marriage Project-টাও উনিই চালান। তিনি বলেন:

আসলে মানুষ তো আলাদা আলাদা। যদি আপনার লক্ষ্য হয় পেশাগত এবং অর্থনৈতিক সাফল্য, তাহলে দেরিতে বিয়ে করাটাই আপনার জন্য বেস্ট। আর যদি সন্তানসন্ততি নিয়ে ধার্মিক জীবন কাটাবেন, তাহলে বিশের ঘরেই বিয়ে-সন্তান সেরে ফেলা উচিত। [6]

ঠিক এই পয়েন্টেই পুঁজিবাদী ভোগবাদী বস্তুবাদী পশ্চিমা সভ্যতার সাথে ইসলামের বিরোধ। পশ্চিমা সভ্যতা কৃত্রিম দীন (জীবন ব্যবস্থা)। আর ইসলাম ফিতরাতের (সহজাত স্বভাবসুলভ) দীন। পশ্চিমা সভ্যতার লক্ষ্য মুনাফা আর ভোগ, হাতিয়ার জুলুম-বঞ্চনা। ইসলামের লক্ষ্য ইহকাল-পরকালে মুক্তি, হাতিয়ার ইনসাফ ও অধিকার বুঝিয়ে দেয়া। পশ্চিমা সভ্যতা নারী-পুরুষের বায়োলজি-বিরুদ্ধ, সাইকোলজির বিপরীত। আর ইসলাম সংগতিপূর্ণ। পশ্চিমা সভ্যতা উপর থেকে রাষ্ট্রের দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করে বিচ্ছিন্ন মানবসত্তাকে। আর ইসলাম মানবসত্তাকে করে রাখে‘সহস্র বন্ধন মাঝে মহানন্দময়’। মানুষ নিয়ন্ত্রিত হয় আত্মিকভাবে, পারিবারিকভাবে, সামাজিকভাবে; যেটা প্রাকৃতিক পদ্ধতি। বিয়ের সাথে আমরা দেখতে পাচ্ছি বয়স, আয়-রোজগার, চাহিদা, স্বাস্থ্য ইত্যাদির একটা সম্পর্ক আছে। দেরি করলে নানান শারীরিক-মানসিক সমস্যা। আবার আয়ের একটা বিষয় আছে, যেটা ইসলামে আরও বেশি জরুরি, কেননা ইসলাম পুরুষকে পরিবারের ভরণপোষণে বাধ্য করে। তাহলে ব্যালেন্সটা কীভাবে হবে? ব্যালেন্স ইসলাম করেই রেখেছে, ইসলামের লক্ষ্যই হল ইনসাফ। মানুষ যেন তার নিজের বায়োলজি-সাইকোলজি, আরেকজন মানুষ, পরিবার, সমাজের সাথে ইনসাফ করতে পারে, সে ব্যবস্থা দেয়াই ইসলামের উদ্দেশ্য।

রেফারেন্স:

[1] Copen et.al. (2012), National Health Statistics, ‘First Marriages in the United States:` Data from the 2006-2010 Natinal Survey of Family Growth’.

[2] How feminism became capitalism's handmaiden - and how to reclaim it, Nancy Fraser [https://www.theguardian.com/…/feminism-capitalist…]
Feminism, Capitalism, and the Cunning of History; Nancy Fraser, American critical theorist, feminist, and the Henry A. and Louise Loeb Professor of Political and Social Science and professor of philosophy at The New School in New York City.

[3] How feminism became capitalism's handmaiden - and how to reclaim it, Nancy Fraser

[4] Erin McDowell (Aug 1, 2019). The average cost of getting divorced is $15,000 in the US — but here's why it can be much higher. Business Insider.

[5] US Census Bureau. 2003. ‘Unmarried-Couple Households, by Presence of Children: 1960 to Present,’ Table UC-1, June 12, 2003.

[6] Dylan Matthews (April 4, 2013). People who marry young are happier, but those who marry later earn more. Washington post.