আমেরিকান বিখ্যাত ডাক্তার,সাইকোলজিস্ট ও দার্শনিক ড. Raymond A. Moody নব্বইয়েরদশকে বিখ্যাত একটা বই লিখেছিলেন, Life after Life. বইটার বিষয়বস্তু ছিল পুরো রহস্যেঘেরা। ড. মোদি বইয়ে এমন সব লোকের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন যারা মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে এসেছেন এবং তারা মৃতপ্রায় অবস্থা কি দেখেছেন সেগুলোর রোমাঞ্চকর বর্ণনা দিয়েছেন। তিনি প্রায় একশ পঞ্চাশ জন লোকের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন যারা প্রায় মৃত্যুমুখে পতিত হয়েছিল এবং বেঁচে ফিরেছিল।
মজার বিষয় হলো, ইসলামের আলোকে ডক্টর মোদির এই বিস্ময়কর বইয়ের পর্যালোচনা করেছেন বিখ্যাত মুসলিম পণ্ডিত, জাস্টিস তাকি উসমানী হাফিযাহুল্লাহ। যেটা পাকিস্তানের বিখ্যাত পত্রিকা 'রোজনামা জঙ্গ' এর উপসম্পাদকীয় কলামে ছাপা হয়।
ডক্টর Raymond a Modi দর্শনশাস্ত্রে পিএইচডি করেছেন, পরবর্তীতে তিনি মেডিকেল সায়েন্সের বিভিন্ন বিভাগে কাজ করেছেন। দর্শন, মনস্তত্ত্ব ও মেডিসিন বিষয়ে তার বিশেষ ব্যুৎপত্তি আছে। ডক্টর মোদি সর্বপ্রথম জর্জ রাচি নামক একজন মনস্তত্ত্ববিদ সম্পর্কে জানতে পারেন যে, তিনি যখন মারাত্মক নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত অবস্থায় তোর কাছাকাছি পৌঁছে যান এবং হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া প্রায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয় তখন ডাক্তাররা কৃত্রিম হৃদযন্ত্র অন্যান্য ব্যবস্থা গ্রহণ করে তাকে বাঁচানোর শেষ চেষ্টা (Resuscitation) করেন। এতে তার শ্বাস প্রশ্বাস ফিরে আসে এবং তিনি সুস্থ হয়ে উঠেন। সুস্থ হওয়ার পরে তিনি বর্ণনা করেছেন যে, যখন ডাক্তাররা তাকে মৃত মনে করেছিল তখন তিনি অত্যাশ্চর্য ঘটনা প্রত্যক্ষ করেন। ঐ মহিলা তার সে সময়ের অবস্থাকে (যা সাধারণ ভাষায় প্রকাশ করা প্রায় অসম্ভব) কিছুটা দার্শনিক ভাষায় প্রকাশ করেন। তিনি বলেন,
আমি যখন আমার সে সময়ের অবস্থা আপনার নিকট বর্ণনা করতে চাই, তখন আমার একটি সমস্যা হলো, আমার যত শব্দ জানা আছে, তার সবই থ্রি ডাইমেনশনাল মানে দৈর্ঘ্য প্রস্থ ও উচ্চতার খাঁচায় আবদ্ধ। আমি এ পর্যন্ত জিওমেট্রির মাধ্যমে পড়েছি যে,পৃথিবীর দূরুত্ব মাত্র তিনটি। কিন্তু ডাক্তার আমাকে মৃত ঘোষণা করার পর আমি যা কিছু দেখেছি, তাতে বুঝতে পেরেছি যে, সে জগতে তিনের অধিক দুরুত্ব বিদ্যমান। এজন্যই সে অবস্থা পরিপূর্ণ বর্ণনা করা আমার সাধ্যতীত। তারপর তিনি বলছেন যখন তিনি মৃত্যুর কাছাকাছি উপনীত তখন তার শারীরিক অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছে গেল যে, সে নিজেই শুনতে পেল যে, তার ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করছেন। হঠাৎ সে একটি কষ্টদায়ক শব্দ শুনতে পেল। সাথে সাথে তার এমন অনূভুত হলো যে, সে অতিদ্রুত দীর্ঘ ও অন্ধকারাচ্ছন্ন সুড়ঙ্গ অতিক্রম করছে। অতঃপর হঠাৎ সে অনুভব করলে যে, সে তার দেহ থেকে বাইরে চলে এসেছে। সে দূরে দর্শকের ন্যায় নিজ দেহ দেখতে লাগলো। সে দেখতে পেল যে, সে নিজে একটি দর্শনীয় স্থানে দাঁড়িয়ে আছে এবং তার দেহ আগের মতোই খাটে পড়ে আছে। ডাক্তাররা ঝুঁকে তার বুকের উপর ম্যাসেজ করছে এবং কৃত্রিম উপায়ে শ্বাস-প্রশ্বাস চালু করার চেষ্টা করছেন। সামান্যক্ষন পরে সে তার অনুভূতি শক্তি ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করে বুঝতে পারল যে, এই নতুন অবস্থায়ও তার একটি শরীর আছে। কিন্তু তার বর্তমান শরীর পূর্বের ছেড়ে আসা শরীর থেকে ভিন্ন। তার বর্তমান শরীরের অবস্থাও অন্য রকম। এ অবস্থায় কিছুক্ষণ পর সে তার মৃত আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধবদের দেখতে পান। আতঃপর সে একটি নূরের সত্তা বা মাখলুক( Being of Light) দেখতে পায়। সে সত্তা তাকে বলে যে, তুমি তোমার বিগত জীবনের হিসাব হিসাব নাও। এসব কথাসমূহ সাধারণন Sound/শব্দের মাধ্যমে না হয়ে অন্যভাবে (Nonverbal) তার কাছে শ্রুত হয়।
তারপরে সেই নূরের স্বত্তা নিজেই ঐ ব্যাক্তির সামনে তার জীবনের সকল গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা তাকে দ্রুত দেখাতে থাকে। এক পর্যায়ে সে তার সামনে একটি বাধা দেখতে পায়, সে বাধা সম্পর্ক সে নিজেই বুঝতে পারে, এটা তার দুনিয়ার জীবন ও মৃত্যুর পরের জীবনের মাঝখানের সীমান্ত (বর্ডার)। ঐ সীমান্তের নিকট পৌঁছে সে জানতে পারে যে, এখন তাকে দুনিয়ায় ফিরে যেতে হবে। এখনো তার মৃত্যুর সময় হয়নি। এরপর সে অজ্ঞাতপন্থায় তার পূর্বের শরীরে ফিরে আসে, যা সে খাটের উপর ছেড়ে এসেছিল। সুস্থ হবার পর সে তার অবস্থা অন্যকে জানাতে চায়, কিন্তু প্রথমত তার ঐ অবস্থা পরিপূর্ণরূপে বর্ণনা করার জন্য মানুষের সকল শব্দভাণ্ডার অপ্রতুল মনে হয়। দ্বিতীয়ত যখন সে এসক কথা মানুষকে বলে তখন তারা তাকে বিদ্রুপ করতে আরম্ভ করে। এজন্য সে নিশ্চুপ থাকে৷
ডক্টর Raymond A. Moody তাঁর এই বইতে (Life after life) এরকম প্রায় দেড়শো ব্যাক্তির অত্যাশ্চর্য অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন যেগুলো সত্যিই মিরাকল।