প্রতিষ্ঠানগতভাবে ধর্মনিরপেক্ষ দেশে ধর্মীয় বিধান/চিহ্ন বাদ দেয়া যায় (হিজাব, টুপি)। কিন্তু যোগ করা যায় না। এটা মুসলিম রাষ্ট্র নয়, এটা সেক্যুলার রাষ্ট্র, যা ইসলামকে বাদ দিলে কিছু বলবে না, ইসলামকে যোগ করলে বাধা দেবে। রাষ্ট্রের ৪ মূলনীতি সম্পর্কে তাত্ত্বিকভাবে না জানা শিক্ষিত নাগরিক হিসেবে আমাদের সবার জন্য লজ্জাজনক।

সেতু বিভাগে বর্তমান কেবিনেট সচিব ছিলেন আমার আব্বা মুহতারামের বস। প্রধান হিসেবে তাঁর পদ্ধতিকে আমি রোল মডেল মনে করি। সে আঙ্গিকে প্রতিষ্ঠান প্রধান হিসেবে (সরকারি বা বেসরকারি) আপনি যেভাবে দাওয়াহ করবেন একটা আউটলাইন যদি বলি:

১.

প্রথমে আপনার প্রতিষ্ঠানে আপনি একটি মসজিদ প্রতিষ্ঠা করবেন। সরকারি প্রতিষ্ঠানেও সরকারি খরচেই এটা করা যায়। কমপক্ষে অর্ধেক কর্মচারী একসাথে নামায পড়তে পারে, এতবড় রুম, মসজিদের মত সুসজ্জিত। একইভাবে নারী কর্মীদের জন্যও আলাদা ব্যবস্থা থাকবে। সুন্দর সাউন্ড সিস্টেম থাকবে।

২.

নসীহার প্রথম ধাপ অবশ্যই টাখনুর উপর কাপড় বা পর্দা নয়। প্রথম ধাপ অবশ্যই নামায। নামায যাকাত, সাওম ও ইত্যাদির (প্রায়োরিটি বুঝে) দাওয়াহ স্টিকার থাকলো সবার ডেস্কে, করিডোরে। টয়লেটের দরজায় টয়লেটের আদব লেখা স্টিকার। লিফটে উঠানামার যিকির লেখা স্টিকার। সেতু ভবনে আমি এগুলো দেখেছি ব্যাপকাকারে। এটা একটা পরিবেশ তৈরি করে। ক্যালিগ্রাফির ছবি রাখলেন জায়গায় জায়গায়।

৩.

অফিস চলাকালে যুহরের নামায অফিসে পড়ার সুযোগ থাকে। প্রধান নিজে মহাসমারোহে সালাতে যাবেন। পথে যেতে যেতে কর্মচারীদের ডাকতে ডাকতে যাবেন। 'বসের ডাক' বলে কথা।

৪.

জামাতে সালাত আদায় করবেন। জামাতের পর হয় নিজে (যদি ইসলামী জ্ঞান থাকে), নয়তো কর্মীদের মাঝে যার ইসলামী জ্ঞান আছে, বা নিয়োগপ্রাপ্ত ইমাম সাহেব সমবেতদের উদ্দেশ্যে ১৫ মিনিট বক্তব্য দেবেন। প্রতিদিন। কীসের উপর কথা হবে, তা সিলেবাস করা থাকবে (টাখনুর উপর, পর্দা এখানে আলোচনা হবে)। বিতর্কিত কোনো বিষয়ে কথা হবে না। সেতু বিভাগে সচিব সাহেবের এই ১৫ মিনিট কর্মীরা জায়গা না পেয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে শুনতো, খুব এলেমদার মানুষ। এটা হল আপনার দাওয়াহর ফিল্ড। অফিসিয়াল নোটিশ দাওয়াহ না, এটা আদেশ।

৫.

এই ১৫ মিনিট খুব আকর্ষণীয় করে তোলার ব্যাপার আছে। খুব চুম্বক। যথেষ্ট বাক-দক্ষ না হলে নিজে করতে যাবেন না। কর্মীদের মাঝে বাচনে দক্ষ ও কারিশমাটিক কাউকে এ কাজে লাগান। ইমামও সেভাবেই নিয়োগ দেয়া দরকার। এই ১৫ মিনিট একই সাথে ইনফরমেটিভ ও এন্টারটেইনিং হতে হবে। যেহেতু লাঞ্চটাইম, ১০-১৫ মিনিটের বেশি সময় নেয়া যাবে না। কোনোদিন কোনো বই থেকে বা তাফসীর থেকে চমৎকার আকর্ষণীয় কোনো অংশ পড়া হবে। এভাবে এই ১৫ মিনিটকে বৈচিত্রময় ও আনন্দঘন করে তোলা, যাতে অফিসের বিরতিতে এটা একই সাথে রিল্যাক্সিংও হয়।

৬.

সিনসিয়ার কর্মীদের মাঝে দীনদার, প্র্যাক্টিসিং-দের প্রতি আপনার আলাদা সুনজর থাকবে। এবং বস হিসেবে প্রশংসা সবারই করবেন। কিন্তু প্র্যাক্টিসিংদের আলাদা নৈকট্য যেন নন-প্র্যাক্টিসিংদের চোখে পড়ে। দায়িত্ব দেয়া, প্রমোশন ইত্যাদি, সুযোগ সুবিধা, সবার সামনে তাদেরকে উদাহরণ হিসেবে পেশ করা। সবাই যেন বোঝে, বস দীনদার মানুষ পছন্দ করেন। নতুন যারা প্র্যাক্টিসের চেষ্টা করছে, তারাও যেন আপনার প্রিয় হয়ে ওঠে।

বলা নেই, কওয়া নেই, একদিন হঠাৎ একটা নোটিশ। এটা কার্যকর নয়। এতক্ষণ করলাম কার্যকারিতার আলাপ। এবার ব্যর্থতার আলাপ। ডা. আবদুর রহিম স্যারের এই চেষ্টা বা এরকম চেষ্টা সরকারি পর্যায়ে এই প্রথম। এরকম ব্যর্থ চেষ্টাও সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে আরও হওয়া প্রয়োজন। আমাদের ভুল ভাঙতে এটা দরকার। আমরা যারা ৯০% মুসলিমের দেশ, ২য় বৃহত্তম মুসলিম রাষ্ট্র বলে অর্গাজমিক ফীল নিই, তাদের ভুল ভাঙার জন্য এধরনের ব্যর্থচেষ্টা আরও হওয়া দরকার। যাতে বুঝা যায়, এদেশ মুসলিমের না, ইসলামের না। এ দেশ সেক্যুলারিজমের। এমনকি আপনার ইসলামাইজড সেক্যুলারিজমও চলবে না, আমাদের সেক্যুলারিজমের কেবলা পশ্চিমবঙ্গ। কলকাতা-ধারক সেক্যুলার না হইলে আপনি এদেশে বাহবা পাবেন না। গায়েগতরে ইসলাম নিয়া এদেশে আপনার বেইল নাই। কেননা, ইসলাম কায়েম করা সেক্যুলারিজম ধর্মের পরিপন্থী।