ইতিহাস কেবল ধারাবিবরণী নয়। ইতিহাসের ক্ষেত্রে ঘটনার গভীরতা ও পারিপার্শ্বিকতা চিন্তা করা চাই। ইতিহাসে লুকায়িত আছে সুন্নাতুল্লাহ বা ‘বান্দাদের জন্য আল্লাহর নির্ধারিত রীতি।’ সেটা বের করা গেলেই ইতিহাসের অর্থ বেরিয়ে আসে।

মনের দরজা জানালা খুলে নিয়ে পড়তে হবে। দুনিয়ার কোনোকিছুই সরল রেখায় চলে না। একেকটা জিনিসের পেছনে বহু ফ্যাক্টর কাজ করে। এরপরও আমরা সবকিছুকেই কমন ফর্মুলায় ফেলি। সেই ফর্মুলাটা ফলো করি বা এভোয়েড করি। এটাই আল্লাহর রীতি ধরে নিই। আর দুআ করি, যাতে নেপথ্যে ক্রিয়াশীল তাঁর যত রীতি আছে সবগুলোর মাঝে ফাইন টিউনিং করে আল্লাহ যেন আমার উদ্দেশ্যটা পুরো করে দেন। মোটাদাগে একটা সরলীকৃত ফরমেট আমরা বের করতে চাই নিজেদের অনুসরণের জন্য। এবারও আমরা সেটাই করব। মানবমন ও সমাজের একদম সাধারণ আদিম সহজাত প্রবৃত্তি নিয়ে কিছু কথা বলব।

মানুষ তার পরিবেশ দ্বারা ভীষণভাবে প্রভাবিত হয়। ভীষণভাবে। এটা কারো সত্যায়নের দরকার নেই। আমাদের বাস্তব অভিজ্ঞতাই এজন্য যথেষ্ট। এমনকি বাকি সব ফ্যাক্টর অপরিবর্তিত থাকলে (সেটেরিস পেরিবাস) কেবল পরিবেশ একজন লোককে ১৮০ ডিগ্রি বদলে দিতে পারে। ইবনু খালদুন বলছেন, প্রথম প্রজন্মের মাঝে ধর্মবোধ প্রবল থাকে। তার ‘আসাবিয়া তত্ত্ব’-টা আমরা ব্যক্তি লেভেলে খাটাব। প্রতি পরবর্তী প্রজন্ম ভোগবিলাসের দিকে ঝুঁকতে থাকে, ধর্মীয় উপাদান কমতে থাকে, দুনিয়ামুখিতা বাড়তে থাকে। তার মানে প্রথম পুরুষ যতই ধার্মিক ও গোত্রপ্রীতি (ধরে নিচ্ছি ধর্মপ্রীতি-মুসলিমপ্রীতি) ওয়ালা হোক। পরের দুই-তিন পুরুষে তার জায়গা নিয়ে নেয় ধর্মহীনতা ও অসাম্প্রদায়িকতা (নিজ ধর্মের লোকের সাথে দূরত্ব ও পরধর্মের লোকেদের সাহচর্যপ্রিয়তা)। এটা বাড়তেই থাকে প্রজন্মে প্রজন্মে, যদি না আল্লাহ অন্য কোনো ফাইন টিউনিং করেন।

পশ্চিমা সমাজটাকে বুঝব আমরা এখন। এখন এই মুহূর্তে বাংলাদেশে আমরা সমাজ সংগ্রামে লিপ্ত পশ্চিমা সভ্যতার বিরুদ্ধে। টিভিতে দেখছেন ইউরোপ-আমেরিকার বেহেশত, হুর, সুখ, আয়েশ। আবার হুজুর নামক একটা শ্রেণি ওয়াজে বলছে টিভি হারাম, শয়তানের বাকসো। আবার টিভিতেই আরেক হুজুরের প্রোগ্রাম হয়, সেটাও না দেখলে চলছে না। একটা দ্বন্দ্ব। নিজের মধ্যে, সমাজের মধ্যে। না পারছেন পুরো পশ্চিমী হতে, না পারছেন পুরো পশ্চিম ডিনাই করতে। সবখানে একটা দ্বন্দ্ব। ঠিক এই দ্বন্দ্বটাই ইউরোপ-আমেরিকা শেষ করে এসেছে অষ্টাদশ-ঊনবিংশ শতকে। এখন বাংলাদেশে নারীদের যে অবস্থা, সেটা ইউরোপ আমেরিকা ৫০-৬০ এর দশকে শেষ করে এসেছে। ইউরোপ-সংলগ্ন মুসলিম দেশগুলো তারপর। আমাদের দেশে নব্বইয়ের দশকের দিকে। এখন সেটা সৌদিতে। এখন পশ্চিম যে অবস্থানে আছে, আমরা সেখানে পৌঁছাব ২০৪০-৫০ এর দিকে (সেটেরিস পেরিবাস)। উপমহাদেশে দেওবন্দি ও সৌদিতে সালাফি আন্দোলন না থাকলে আমরা আরো ২০ বছর আগেই ভেসে যেতাম স্রোতে। যেমন গেছে মিসর, তিউনিসিয়া, সিরিয়া, লেবানন, আমাদের বহু আগেই।

একটা উদাহরণ দিলে সহজ হবে। প্রফেসর জেফ্রি লাংয়ের আত্মসমর্পণের দ্বন্দ্ব বইটা আমাকে খুব সাহায্য করেছে পশ্চিমা সমাজকে বুঝতে। বইটা আমি সবাইকে পড়তে বলব না, কেন তা পরে আসছি। একটা ইসলামিক সেমিনারের ঘটনা উল্লেখ করেন উনি। একজন মুসলিম বোন উপস্থিত গেস্ট আলিমকে জিজ্ঞেস করেন : আচ্ছা শাইখ, এই যে আপনারা নারী-পুরুষ আলাদা করে বসিয়েছেন, এটার দ্বারা আমরা অফেন্ডেড ফিল করছি। আপনার কি মনে হয় না, একসাথে মিশিয়ে বসার সুযোগ দিলে আমরা মেয়েরা আরো ভালো শুনতে পারতাম? শাইখ প্রশ্নের জবাব না দিয়ে পরের প্রশ্নে চলে যান। আমাদের সমাজের সাথে মেলান এবার। আমাদের সমাজে মেয়েরা এখনো আলাদা বসতেই কমফোর্ট ফিল করে। এটা ঐ বোনের দ্বীনী জ্ঞানের কমতি যতটা না, তার চেয়ে বেশি আমেরিকার সমাজ-বাস্তবতা। সমাজমানসে নারী-পুরুষ সমতা, ফ্রি-মিক্সিং এতটাই নির্দোষ এতটাই স্বাভাবিক, এতটাই যে, আলাদা বসতেই তারা আনইজি ফিল করছে। এটা আমেরিকার সমাজ। এটা আমাদের মতো নয়। ইসলামের যে বিষয়গুলোতে আমাদের এখানে, বা অন্য মুসলিম সমাজে প্রশ্ন উঠবে না, ওখানে সেগুলোতেও মুসলিমদের মধ্য থেকেই প্রশ্ন ওঠে। কারণটা কী?

কাফির রাষ্ট্রে মুসলিম মনস্তত্ব কেমন হয়, আরেকটা উদাহরণ দিই। আমেরিকাতে বিভিন্ন ভার্সিটিতে মুসলিম স্টুডেন্টস এসোসিয়েশন (MSA) আছে। এমনই এক MSA-এর প্রোগ্রামে, খেয়াল করুন 'মুসলিম ছাত্রদের প্রোগ্রামে' একজন মুসলিম ছাত্র প্রশ্ন করলেন দাঈ উস্তায ড্যানিয়েল হাকিকাতজুকে : সমকামীদের অধিকারের ব্যাপারে ইসলামের অবস্থান কী? তো উনি হীনম্মন্যতা না রেখে স্ট্রংলি ইসলামের অবস্থান তুলে ধরলেন। পরে শুনলেন : এমন একজন কট্টরপন্থি দাঈকে কেন প্রোগ্রামে আনা হলো, তা নিয়ে মুসলিম ছাত্ররাই প্রশ্ন তুলেছে।

ইসলাম ব্যক্তিপর্যায়ে সীমাবদ্ধ ধর্ম নয়। ব্যক্তির নিজস্ব আধ্যাত্মিকতা-সর্বস্ব ধর্ম নয়। যেমনটা খ্রিষ্টধর্ম। খ্রিষ্টবাদের একমাত্র গুরুত্বপূর্ণ আকিদা হলো : ঈসা আলাইহিস সালামকে আল্লাহর একমাত্র ঔরসজাত (begotten) পুত্র বলে মেনে নেওয়া এবং এটা মেনে নেয়া যে, তিনি আমাদের পাপমোচনের জন্য ক্রুশে আত্মাহুতি দিয়েছেন। এরপর আপনি কী করলেন না করলেন, তা আর গুরুত্বপূর্ণ নয়। এরপর আপনি চাইলে গে হন, চাইলে ঈসায়ি মুসলিমও থাকতে পারেন। যা ইচ্ছে করতে পারেন, আপনাকে ঈসা জাহাজে করে বেহেশতে নেবেন। এজন্য দেখেন খ্রিষ্টান মিশনারিরা কোনায় কোনায় গিয়ে উপজাতিদের খ্রিষ্টান বানিয়েছে। ডন রিচার্ডসনের Eternity in Their Hearts বইয়ে দেখবেন, পাদরিরা গিয়ে সাঁওতালদের বলছে, আমরা তোমাদের ‘ঠাকুর জিউ’-এর লোক। বিশ্বাস বদলে দিয়ে আচার-পার্বণ, ব্যস। বিপরীতে ইসলামের প্রচারটা ভিন্ন। দেখুন, সাহাবিরা যুদ্ধ করেন, দেশ জয় করেন, এরপর ইসলাম প্রতিষ্ঠা করেন। মুসলিম খলিফার জন্য বছরে একবার বা দুবার কাফিরদের সীমান্তে ফৌজ পাঠিয়ে ইকদামি জিহাদ ফরজ। জয় করে প্রচার। কেননা ইসলাম শুধু বিশ্বাস নয়। যখন আপনি কাউকে ইসলাম শেখাচ্ছেন, আপনি প্রথমত তাকে…

  • আধ্যাত্মিকতা শেখাচ্ছেন
  • এরপর আত্মশৃঙ্খলা
  • এরপর শেখাচ্ছেন সমাজজীবন (আচার-পার্বণ সমাজজীবনের অংশ)
  • এরপর অর্থব্যবস্থা
  • রাষ্ট্রনীতি
  • যুদ্ধনীতি
  • আইন-বিচার

ভূমি জয় না করে নতুন একটা সমাজ, নতুন একটা বাজার-অর্থনীতি, নতুন একটা রাষ্ট্রচিন্তা আপনি কখনোই প্র্যাকটিক্যালি দেখাতে পারেন না। কেউ পারেনি, না সমাজতন্ত্র, না গণতন্ত্র, কেউ না। পৃথিবীর কোনো ওয়ার্ল্ডভিউ, কোনো জীবনব্যবস্থা তরবারি ছাড়া ছড়ায়নি।

  • ফরাসি বিপ্লবে রাজতন্ত্র হটিয়ে গণতন্ত্র আনতে তরবারি লেগেছে।
  • রুশ বিপ্লবে রাজতন্ত্র সরিয়ে সমাজতন্ত্র আনতে তরবারি লেগেছে, সমাজতন্ত্র টিকিয়ে রাখতে তরবারি লেগেছে।
  • মাও সে তুংয়ের সাংস্কৃতিক বিপ্লবে গণতন্ত্র সরিয়ে সমাজতন্ত্র আনতে তরবারি লেগেছে, টিকিয়ে রাখতে লেগেছে।
  • লিবিয়া-ইরাকে স্বৈরতন্ত্র সরিয়ে গণতন্ত্র দিতে তরবারি লেগেছে।
  • আফগানিস্তানে গণতন্ত্র সরিয়ে ইসলাম আনতে তরবারি লেগেছে, আবার ইসলামি ইমারাত সরিয়ে গণতন্ত্র দিতেও তরবারি লেগেছে। [১]

যখন সামনে ব্যাবহারিক একটা কাঠামো থাকবে না, তখন জন্ম নেবে প্রশ্ন। যেমন এখন। হদ নিয়ে প্রশ্ন, পর্দা নিয়ে, মুরতাদের শাস্তি নিয়ে, জিযিয়া নিয়ে। কারণ, সামনে কোনো উদাহরণ নেই। রাষ্ট্র ও আইন নেই সামনে, তাই মুসলিম অধ্যুষিত দেশেও প্রশ্ন উঠছে। এখানে আপাত একটা সমাজ আছে, তাই সমাজ নিয়ে কিছু উত্তর এখনো অবশিষ্ট আছে। এখন যেখানে মুসলিম-সমাজ নেই (পশ্চিম), শিক্ষা দিয়ে ধুমসে ঢুকছে তাদের সমাজের বিষ, সেখানে স্বাভাবিকভাবে ইসলাম নিয়ে মুসলিমদের আরো বেশি প্রশ্ন থাকবে।
তাদের রাষ্ট্রচিন্তা আমাদের রাষ্ট্রচিন্তা আলাদা, সাংঘর্ষিক। তাদের সমাজচিন্তা, আমাদের সমাজচিন্তা আলাদা এবং সাংঘর্ষিক। ইসলাম একটা টোটালিটি, হোলিস্টিক সিস্টেম। যখন আপনি ইসলামের রাষ্ট্রচিন্তাকে কম্প্রোমাইজ করলেন, তো সমাজবিধানের কিছুটাও আপনাকে ছাড় দিতে হবে। এরপর তা এসে পড়বে পরিবারের ওপর, পারিবারিক ইসলামেও ছাড় দিতে হবে আপনাকে। এরপর ব্যক্তিগত আচারেও আপনাকে ছাড় দিতে হবে। প্রতিটি ছাড় আপনাকে আরো ছাড় দিতে বাধ্য করে। কীভাবে পশ্চিমা রাষ্ট্রচিন্তা তাদের সমাজচিন্তাকে চাপিয়ে দিয়ে মুসলিমের ব্যক্তিক ইসলামকে নষ্ট করে, তার কিছু উদাহরণ দেখুন—

ক. ছেলেকে LGBT ক্লাস করতে না দেয়ায় বৃটেনে মুসলিম পিতাকে জেল। কয়দিন দিবে জরিমানা এই বাবা। থাকতে তো হবে (?) সেখানেই। (Dad who refuses to send son to school over LGBT lessons is facing jail)

খ. নিকাব নিষিদ্ধ করে দেশে দেশে আইন পাশ ও জরিমানার বিধান। (Which countries have a 'burqa ban'?)

জরিমানা গুণতে হবে (Denmark veil ban: First woman charged for wearing niqab)

গ. জার্মান কোর্ট হেডস্কার্ফ পরতেও বারণ করেছে। (Berlin court bars Muslim teacher from wearing headscarf)

ঘ. ইনসিওরেন্স ইত্যাদি সুদী ব্যবস্থার আওতায় সব নাগরিককে আসতে হয়। (কেটে নেয়া টাকা ব্যালেন্স করতে অনেক আলিম জমাকৃত টাকার সুদ গ্রহণকে জায়েজও বলে থাকেন সেখানে)

মাঝে কিছু ছবি দেখলাম। গ্রিক সীমান্ত থেকে সিরীয় যুবকদের খেদিয়ে দিয়েছে। আন্ডারপ্যান্ট পরে শীতে যারা কাঁপছে, তাদের সবাই যুবক। তাদের দেশে অলরেডি একটা অংশ ইসলাম কায়েমের জন্য, দ্বীন পালনের পরিবেশদায়ী শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য মেহনত করছে। আর এরা প্রাণভয়ে আশ্রয় নিচ্ছে কাফির দেশে। এমন নয় যে, সংগঠিত হওয়া কঠিন, অলরেডি সংগঠিত মেহনত চলছে। আসল কথা হলো, কাফিররা নয়; মুসলিমদের মধ্যে বিরাট একটা অংশ ইসলামকে ভয় পায়। ইসলামি সমাজ-আইন-বিচার-শাসনকে ভয় পায় কাফিদের চেয়ে বেশি। এরা ইসলাম চায়, ইসলামি রাষ্ট্র চায় না। সেক্যুলার ইসলাম চায়। কাফিরদের মনমতো ইসলাম পালন করতে চায়। আপনাদের নিয়ে যাচ্ছি ১৪০০ বছর আগে। মদিনা নগররাষ্ট্র। কিছু মানুষ সেখানে সামনের কাতারে সালাত পড়ে, ইশা ও ফজরের সালাতও জামাআতের সাথে পড়ে, কুরআন তিলাওয়াত করে আবেগঘন তারতিলে। কিন্তু মক্কার মুশরিকদের সাথে সম্পর্ক রাখে, সাজিশ করে ইহুদিদের সাথে। যেকোনো সুযোগে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে উৎখাত করার জন্য। ইসলামকে সহ্য হয়, সহ্য হয় না ইসলামি রাষ্ট্র-সমাজ-আইন-বাজার। মিলিয়ে নিন, এরাও বড় গলায় বলত আমরা মুসলিম, আমাদের ইসলামে কোনো খাদ নেই। কিন্তু আল্লাহর খাতায় তারা কী? সুতরাং ইসলাম পালনের নামে সুবিধার যে অজুহাত দাঁড় করাচ্ছেন, সেই ফাঁকি আল্লাহকে দিতে পারবেন তো?

কাফিরদের মাঝে থাকার সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো, তাদের সাথে ওঠাবসার ফলে সহমর্মিতা তৈরি হয়। তাদের কুফরকে নির্দোষ মনে হয়, শিরককে তার অধিকার মনে হয়। তাওহিদকে আবশ্যিক মনে হয় না। হয় আপনার কাছে, নয় আপনার সন্তানের কাছে, নয়তো আপনার নাতির কাছে। দ্বীনী গায়রত চলে যায়, দ্বীনের প্রবল বিধান নিয়ে হীনম্মন্যতা, তা থেকে সংশয়, তা থেকে ইরতিদাদ। একদম সরলরেখা। একসময় এটা হবেই। এজন্য এককভাবে আপনি দায়ী। সামান্য দুনিয়ার চাকচিক্য, নিরাপত্তা, আরাম, স্বস্তির জন্য আপনি অনন্তকালের শাস্তির রাস্তা বেছে নিলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পশ্চিমা সমাজমানস খুব দ্রুত পরিবর্তন হয়ে গেছে। পশ্চিম আর ইসলাম খুব দ্রুত প্রতিপক্ষ হয়ে গেছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে ‘কাফির দেশে স্থায়ী বসবাস’ নিয়ে ফিকহশাস্ত্রবিদদের আবার ভাবার সময় এসে গেছে। রাষ্ট্রীয় পলিসির কারণে নারী-উদ্দামতা, সমকামিতা, নাস্তিকতা, ইসলামের ফরজিয়াত অস্বীকার প্রভৃতি বাধ্যতামূলকভাবে সন্তানদের শেখাতে হচ্ছে। আর ওয়ালা-ওয়াল বারাআ (মুমিনদের প্রতি ভালোবাসা-বন্ধুত্ব আর কাফিরদের প্রতি ঘৃণা-বিদ্বেষ) তো এমনিতেও নষ্ট হয়, খালদুনীয় ফর্মুলায়।

<image>

ইসলাম একটা বুননের মতো। শুধু সালাতের কথা চিন্তা করেন। দেখেন সালাতের একটা রাষ্ট্রীয় বুনন আছে (মসজিদ-টাইম-সুযোগ তৈরি), একটা সামাজিক বুনন আছে (নামাযিদের মাঝে থাকা-বেনামাযির প্রতি সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি), পারিবারিক বুনন আছে (বাবা-মায়ের কেয়ার, তিরস্কার ইত্যাদি), সেই সাথে ব্যক্তিক বুনন (দায়বদ্ধতা, অভ্যাস ইত্যাদি)। সবকটা বুনন মিলে ‘ইকামাতে সালাত’ হচ্ছে, সালাত প্রতিষ্ঠা পাচ্ছে। নামাযি বাড়ছে, বেনামাযি নামাযি হচ্ছে, নামাযি জামাআতের পাবন্দি করছে, সালাতকে জীবনে ধরে রাখছে। এভাবে দ্বীনের প্রত্যেকটা বিধানের পরতে পরতে বুনন আছে। এক পরত ছুটিয়ে দিলে বাকিগুলোও আস্তে আস্তে ছুটে যায়। কর্তৃপক্ষের লেভেলে সালাতের সহায়তা বাদ দিলে শেষে গিয়ে ব্যক্তিজীবনেও সালাত বিঘ্নিত হয়। গ্রামের দিকে অনেক জায়গায় এখনো বেনামাযিকে অন্যচোখে দেখা হয়, গোষ্ঠীর মধ্যে ভিন্ন নজরে দেখা হয়। সালাতের মতো একান্ত ব্যক্তিগত বিষয় দিয়ে উদাহরণ দিলাম। অপেক্ষাকৃত বেশি সামাজিক বা পারিবারিক বিধানগুলো এখন মুসলিম দেশেই সেক্যুলারিতার কারণে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সেখানে কাফির দেশে কীভাবে আপনারা ইসলাম ভালোভাবে পালনের দাবি করছেন, আমি বুঝতে পারছি না।

যদি শুধু ব্যক্তি বা পরিবারে আপনি ইসলাম চর্চা করছেন বলে মনেও করেন, সেটা নিম্নমুখী, ক্ষয়িষ্ণু। যেটা ওপরের উদাহরণ থেকে দেখলাম। রাষ্ট্র নেই (মুসলিম দেশেও রাষ্ট্র নেই অবশ্য), সমাজ নেই (এটা তো মুসলিম দেশে আছে এটলিস্ট কিছুটা), অতএব আপনার পারিবারিক ও ব্যক্তিক ইসলাম ক্ষয়িষ্ণু। ইবনু খালদুনও সেটাই বলছেন। আরাম-আয়েশ নিরাপত্তা বাড়বে, ধর্ম কমবে। আপনার যা আছে, তাও থাকবে না, সন্তানের আরো থাকবে না, নাতির আরো না। এটাই পরিবেশ। এমনকি পশ্চিমের আলিমরাও এ থেকে মুক্ত নন। তারা ফেরেশতা নন, তাই পরিবেশ-সমাজ-সাহচর্যের প্রভাব থেকে মুক্ত নন। দেখুন একজন মুসলিম মেয়ে অপমানবোধ করছে, কেন তাকে আলাদা বসানো হলো, কেন ছেলেমেয়ে মেশানো হলো না। মুসলিম ছেলেরা দাঈকে অপছন্দ করছে, কেন তাদের সমকামী বন্ধুদের মেনে নেওয়া হবে না। এই রকম মুসলিম কমিউনিটির কাছে জনপ্রিয় হতে চাইলে বা এদের মাঝে কাজ করতে চাইলে হিকমাহর নামে আপনাকে অবশ্যই দ্বীনের কিছু অংশ চেপে যেতে হবে। নইলে এরা আপনার কথা শুনবে না, আপনাকে অপছন্দ করবে। মেয়েটির প্রশ্নে সেই আলিম জবাব না দিয়ে কেন পরের প্রশ্নে গেলেন, এটা জেফ্রি লাংয়ের লেগেছে। কেন হাকিকাতজু ভাই সমকামীদের অধিকারের পক্ষে অবস্থানকে কুফর বললেন, এটা মুসলিম ছাত্রদের লেগেছে। এভাবে আপনি পশ্চিমা মুসলিম কমিউনিটির কাছে পাত্তা পাবেন না।

এজন্যই পশ্চিমা সেলিব্রেটি দাঈ-আলিমদের উপস্থাপিত ইসলাম অপূর্ণাঙ্গ হয়। পুরোটা তারা তুলে ধরতে পারেন না, চাইলেও পারেন না। পুরোটা প্রেজেন্ট করতে চাইলে তারা সমস্যায় পড়বেন। ইসলামের সামাজিক বুনন তুলে ধরলে সামাজিকভাবে আপনি বয়কট হবেন, যেমন হাকিকাতজু ভাই হলেন। রাষ্ট্রীয় বুনন তুলে ধরলে আপনি জেলে যাবেন, যেমন শাইখ জিবরিল গেছেন। পশ্চিমা দাঈদের উপস্থাপিত ইসলাম হতে হয় পশ্চিমা সমাজের সাথে মিলিয়ে, পশ্চিমা রাষ্ট্রচিন্তার সাথে মিলিয়ে। ব্যালান্সিং ইসলাম উইদ সিভিল রাইটস। এ এক নতুন ইসলাম, এক নতুন ধর্ম হয়ে যায় তখন। পশ্চিমা ইসলাম। এখানে ইসলামের সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় বুনন থাকে না। পারিবারিকও না, ব্যক্তিস্বাধীনতার তোড়ে। বেশি তেড়াব্যাড়া করলে সন্তান কেসও করে দিতে পারে। ফলে তা অতিক্ষয়িষ্ণু এক আজব ধর্ম হয়ে দাঁড়ায়, যেখানে কুফরের পাশে দাঁড়ানো হয় টিকে থাকার কৌশল, ধর্মের খুঁটি। ব্যক্তিজীবনের ইসলাম নিশ্চিত করতে আপনাকে জগতের নিকৃষ্টতম কর্ম (যেমন সমকামিতা) কে অধিকার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য রাস্তায় নামতে হবে। অথচ অলরেডি আপনি কুফরের সীমা অতিক্রম করে ফেলেছেন। হাদিস : অন্যায় হতে দেখলে হাত দিয়ে বাধা দাও, নয়তো মুখে নিষেধ করো। তাও না পারলে অন্তরে ঘৃণা করো। এর নিচে আর ঈমান নেই। [২] আর আপনি অন্তরে ঘৃণা না করে সেটাকে সিভিল রাইট হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার সংগ্রাম করছেন। মানে ঈমানের শেষ সীমার নিচে চলে এসেছেন। প্রবেশ করেছেন কুফরের সীমায়।

এজন্য পশ্চিমা দাঈদের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ খুব সতর্কতার সাথে গ্রহণ করতে হবে। ঠিক যেমন ডাক্তার জাকির নায়েক যখন কোনো হিন্দুকে বোঝানোর জন্য হয়তো কোনো একটা বিষয় ব্যাখ্যা করলেন, যেটা আপনার জন্য নয়, সেটা হয়তো ইসলামের ব্যাখ্যাও নয় বা ডিফেন্সিভ ব্যাখ্যা। তেমনি এসব দাঈর ব্যাখ্যা, ভেঙে ভেঙে বিশ্লেষণ করে লঘুকরণ, এটা আমেরিকান মুসলিমদের জন্য, তাদেরকে তাদের সমাজবাস্তবতার প্রেক্ষিতে অচেনা ইসলামি সমাজের বুঝ দেওয়ার জন্য; আপনার জন্য নয়। আমেরিকান একজন মুসলিমের মেন্টাল সেট-আপ ও সমাজবাস্তবতা আপনার মতো নয়। ঠিক একই কারণে কাফির ভূমিতে বেড়ে ওঠা কোনো দাঈর সামাজিক-রাষ্ট্রীয় বিধানের ব্যাখ্যা অবশ্যই আপনি নেবেন না। কারণ একই মানস-গঠনের কারণে এলিয়েন (অপরিচিত) ইসলামি সমাজ-রাষ্ট্র-আইনকে সে তার চেনা সমাজ-রাষ্ট্র-আইনের সাপেক্ষে ব্যাখ্যা করবে। উদাহরণ যদি দিই, উস্তায নোমান আলি খান। বড় হয়েছেন, পড়াশোনা করেছেন আমেরিকায়। আপনি কুরআনের ব্যাকরণিক বিস্ময়গুলো তার থেকে নিলেন। কিন্তু যখন তিনি বলছেন—সাহাবিরা পরিচয়ের ভিত্তিতে নিজেদের মাঝে বৈধ কোর্টশিপ (প্রেম) করতেন। তখন আপনাকে ভুরু কুঁচকাতে হবে। এমন কথা প্রত্যাখ্যান করতে হবে। এই ভুরু কুঁচকানো-প্রত্যাখ্যান করা আপনাকে শিখতে হবে, কখন কুঁচকাতে হয় কখন ছুড়ে ফেলতে হয় আপনাকে জানতে হবে। এটা ইলমের বিষয় নয়, কাণ্ডজ্ঞানের আওতায় পড়বে। কারণ নোমান আলি খান যে সমাজে বড় হয়েছেন সেখানে হারাম সম্পর্ক পানিভাত। সেই চোখে তিনি ব্যালেন্স করতে চেয়েছেন স্বাভাবিক মানবপ্রকৃতির তাড়নায়।

সুতরাং ব্যক্তিক ও পারিবারিক ইসলাম আপনি পশ্চিমা দাঈদের কাছে পেলেও পেতে পারেন। সব আবার পাবেন না। অর্থনৈতিক অংশটুকুও পশ্চিমের অর্থব্যবস্থার আলোকে ব্যালেন্স করে তারা আপনাকে জানাবে, ঐটুকুই জানাবে যেটুকু আপনার পশ্চিমে থাকার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াবে না। ঐটুকুই আপনি শুনতে চান, বাকিটুকু শুনতে চান না। কারণ যাদের উদ্দেশে উনি বলছেন, তাদেরকে থাকতেই হবে পশ্চিমে। পশ্চিমে থাকতে অসুবিধা হয়, ইসলামের এমন অংশটুকু তাদের কাছে অপ্রিয়। অপ্রিয়টুকু আপনাকে তারা শোনাবে না। সামাজিকটুকুও পাবেন না। তাহলে কোথায় পাবেন? সেটা পাবেন মুসলিমপ্রধান দেশে, যেখানে ইসলামের সামাজিক দিকগুলো এখনো রয়েছে আংশিক রয়েছে, বা আলিমরা নির্ভয়ে সামাজিক দিকগুলো বলছেন। যেমন বাংলাদেশের কথাই ধরি। অর্থনৈতিক ও সামাজিক দিকগুলোর আলোচনা কমে গেলেও এখনো শেষ হয়ে যায়নি। সুদ, পর্দা, মাহরাম বিষয়গুলোর আলোচনা এলে পরদিন ইমামের চাকরি নেই। তারপরও কিছু আলোচনা আছে। এগুলো জায়িয বা ইনিয়ে-বিনিয়ে জায়িয তো বানাচ্ছে না এটলিস্ট। আবার রাষ্ট্রীয় বিধানগুলোতে তারা কম্প্রোমাইজ করছেন, তাদের মুখে ‘ধর্মনিরপেক্ষতা ইসলামি জিনিস’, ‘শাসকের আনুগত্য না করলে খারেজি’ এসব বয়ান পেলে আপনার ভুরু কুঁচকাতে হবে। কেননা তাদের রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা নেই, ফলে রাষ্ট্রচিন্তাগুলোও তাদের প্রভাবিত, যেমনটা পশ্চিমা দাঈদের সমাজচিন্তা প্রভাবিত। এটা আবার কোথায় পাবেন? এটা পেতে হলে আপনাকে তাকাতে হবে, যেখানে ইসলাম রাষ্ট্রীয়ভাবে আছে। সেখানে আপনি ইসলামের রাষ্ট্রীয় হুকুমগুলোর নির্ভেজাল ব্যাখ্যা পাবেন। তেমনি জিহাদ এমন একটা বিষয় যার সঠিক আনইন্টেরাপ্টেড আনবায়াসড পিওর হুকুম ও ব্যাখ্যা আপনি এ যুগে সেখানেই পাবেন, যেখানে সেটার আমল হচ্ছে। সুবিধার জন্য, হিকমাহর নামে, কারো হুমকি থেকে বাঁচতে কোনো কাটছাঁট করা হচ্ছে না। বিকৃতির জন্য প্রভাবক থেকে তারা মুক্ত। ইসলামের ব্যক্তিক-পারিবারিক-সামাজিক-অর্থনৈতিক-বিচারিক-রাষ্ট্রীয়-আন্তর্জাতিক সকল হুকুমের ব্যাখ্যা ও দর্শন যদি একসাথে চান, আপনাকে সেই ভূমির দিকে তাকাতে হবে, যেখানে ইসলাম জয়ী, ইসলাম যেখানে মিনমিন করে চলে না, বুক চিতিয়ে চলে সেখানে আল্লাহর হুকুম।

এখন আপনি যদি আমেরিকায় অবস্থানকারী কোনো দাঈ থেকে বা আমেরিকায় বেড়ে ওঠা কোনো দাঈ থেকে জিহাদের মতো ইসলামের আন্তর্জাতিক দর্শনের ব্যাখ্যা চান, সেটা হবে আপনার ভুল। যেখানে সে পাশ্চাত্য সমাজের প্রভাবে ইসলামের সামাজিক দর্শনই তুলে ধরতে অপারগ, সেখানে আন্তর্জাতিক দর্শন ক্লিয়ার করা আপনি কীভাবে আশা করেন। হতে পারে তার জ্ঞান সম্পর্কে আপনার অগাধ বিশ্বাস। এটা জ্ঞানের বিষয় নয়, এটা টিকে থাকার ইস্যু। সে সমাজে টিকে থাকতে হলে তিনি এগুলো আপনাকে ক্লিয়ার করতে পারবেন না। সম্প্রতি নোমান আলি জিহাদ সম্পর্কে যা বলেছেন, তা তার জন্য অত্যন্ত স্বাভাবিক। আপনি এই বিষয়ে তার ওপর আস্থা রাখছেন, এটা আমার-আপনার ভুল।

ঠিক একারণেই পরিপূর্ণ ইসলামকে বুঝতে আপনাকে পূর্ববর্তী আলিমদের বক্তব্য নিতে হবে যেসময় ইসলাম বিজয়ী ছিল, তাহলে আপনি পুরো বুননটা পাবেন। আধুনিক সময়ে মুসলিমরা পরাজিত, মানসিকতাও পরাজিত। আধুনিক যুগের স্কলারদের কথা যদি জমহুর (অধিকাংশ) ক্ল্যাসিক্যাল স্কলারদের বিরুদ্ধে যায়, আপনাকে বুঝতে হবে তার সীমাবদ্ধতা, ক্ল্যাসিক্যালদের বিজয়ের যুগে সীমাবদ্ধতা ছিল না। তবেই আপনি আংশিক ইসলামের হাত থেকে মুক্তি পাবেন। ‘তবে কি তারা কিতাবের কিছু অংশ মানে কিছু অংশ মানে না?’র অভিযোগ থেকে মুক্তি পাবেন। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তো স্পষ্ট নির্দেশনা আমাদের দিয়েই গেছেন—সর্বোত্তম আমার যুগ, এর পরের যুগ, তার পরের যুগ। এরপর মিথ্যা প্রকাশ পাবে।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পর প্রথম তিন যুগের চোখে ইসলামকে জানুন, পুরো বুননটা পাবেন। আর এখনকার চোখে নিলে পাবেন সুতোছেঁড়া বুনন—এড়ে যাওয়া শতচ্ছিন্ন এক ইসলাম, যাতে সতরই ঢাকে না। আল্লাহ আমাদের গুনাহগুলো ঢেকে রাখুন। ইয়া সাত্তার।

রেফারেন্স:

[১] necrometrics.com সাইটটা দেখতে পারেন। বিভিন্ন ইতিহাসবিদের রেফারেন্স আছে

[২] সহিহ মুসলিম : 49; সুনানু আবি দাউদ : ১১৪০, ৪৩৪০; সুনানু নাসায়ি : ৫০০৮; সুনানু ইবনি মাজাহ : ১২৭৫, ৪০১৩; মুসনাদু আহমাদ : ১১০৭৩, ১১১৫০, ১১৪৬০, ১১৫১৪; আস-সুনানুল কুবরা, বাইহাকি : ১১৫১৩, ১৪৫৪৮, ২০১৭৯; ; সহিহু ইবনি হিব্বান : ৩০৬, ৩০৭

[৩] আমার যুগের লোকেরাই সর্বোত্তম ব্যক্তি (যারা আমাকে দেখেছে—সাহাবি), অতঃপর যারা তাদের নিকটবর্তী (যারা সাহাবিদের দেখেছে—তাবিয়িন), অতঃপর যারা তাদের নিকটবর্তী (যারা তাবিয়িদের দেখেছে—তাবি তাবিয়িন)। এরপর আসবে মিথ্যা কসম ও মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়ার যুগ।
সহিহ বুখারি : ২৬৫২, ৩৬৫১, ৬৪২৯, ৬৬৫৮; সহিহ মুসলিম : ২৫৩৩; জামি তিরমিযি : ৩৮৫৯; সুনানু ইবনি মাজাহ : ২৩৬২; সহিহু ইবনি হিব্বান : ৪৩২৮, ৭২২২, ৭২২৩, ৭২২৭, ৭২২৮; মুসনাদু আহমাদ : ৩৫৯৪, ৩৯৬৩, ৪১৩০, ৪১৭৩, ৪২১৭; মুসনাদু আবি দাউদ তায়ালিসি : ২৯৭; মুসনাদু আবি ইয়ালা : ৫১০৩, ৫১৪০; মুসনাদুল বাযযার : ১৭৭৭, ১৭৮২; মুসান্নাফু ইবনি আবি শাইবা : ৩২৪০৭; আল-মুজামুল আওসাত, তাবারানি : ২৫৯১, ৩৩৩৬; আল-মুজামুল কাবির, তাবারানি : ১০০৫৮, ১০৩৩৭, ১০৩৩৮

বই: অবাধ্যতার ইতিহাস | সমকালীন প্রকাশন

<image>