আগে দুইটা শব্দ বুঝতে হবে। পশ্চিমা সভ্যতার আগ্রাসনই হল 'শব্দ নিয়ে খেলা'। শুনতে শোনা যায় একরকম, বাস্তবে আরেক রকম। পশ্চিমা নষ্টামি থেকে বাঁচতে চাইলে যেকোনো নতুন শব্দ শুনেই বিশ্বাস করবেন না। আগে শব্দটা গভীরভাবে বুঝা চাই।

(১) সেক্স:
জন্মের সময় আমরা যেটা নিয়ে জন্মাই (জন্মলিঙ্গ)। ছেলেবাবু লিঙ্গ ও অণ্ডথলি নিয়ে। মেয়েবাবু যোনি নিয়ে। এটা তার সেক্স/জন্মলিঙ্গ।

(২) জেন্ডার:
একটা বাবু জন্ম নিল, তার একটা পেনিস আছে। এর ভিত্তিতে তার জন্য ছেলেদের পোশাক কেনা হয়, বড় হলে ব্যাটবল কিনে দেয়া হয়, গাড়ি-আর্মিসেট দেয়া হয়, চুল ছোট করে।কাটা হয়, শার্টপ্যান্ট পরানো হয়। আশা করা হয়: তার গলা মোটা হবে, তার দাড়ি হবে, সে একটা মেয়েকে বিয়ে করবে এবং পেনিট্রেটিভ সেক্স (লিঙ্গপ্রবেশন) করবে।

যদি বাবুটা মেয়ে হতো, তবে তার জন্য মেয়েদের ড্রেস কেনা হত, পুতুল-রান্নাসেট কেনা হতো, চুল বড় করানো হত, কান ফোঁড়ানো হত। আশা করা হত: তার কণ্ঠ হবে চিকন, শরীর হবে নারীসুলভ, সে একটা ছেলেকে বিয়ে করবে এবং রিসেপ্টিভ সেক্স (লিঙ্গগ্রহণ) করবে।
জন্মলিঙ্গের কারণে শিশুর সাথে আমরা যেমন আচরণ করি এবং শিশু থেকে যা আশা করি, সেটা হল 'জেন্ডার' বা কর্মলিঙ্গ।

নিশ্চয় ভাবছেন এ আবার এমন কি? সেক্স যা হবে জেন্ডারও সে অনুপাতেই হবে। এটা নিয়ে এত কথা বলার কি আছে? কিন্তু না। ১৯৭০ সাল থেকে পশ্চিমা বিশ্বে এই দুইটা জিনিস আলাদা ও পরস্পর থেকে স্বাধীন। তাদের মতে, পুরুষের সেক্স নিয়ে জন্ম নিয়েও কারও জেন্ডার নারী হতে পারে। নারীর সেক্স নিয়ে জন্মেও কারও জেন্ডার পুরুষ হতে পারে। জেন্ডার অংশটা আবার পড়ুন ও উল্টো করে কল্পনা করুন। দেখুন সমকামিতার গন্ধ পান কিনা।

নাস্তিক, এক্স-নারীবাদী সেক্সলজিস্ট ও নিউরোসায়েন্টিস্ট ড. ডেবরা সোহ বলছেন: ৯৯% লোকের সেক্স (জন্মগত লিঙ্গ) আর জেন্ডার (লিঙ্গের সামাজিক ধারণা) একই। [The End of Gender]

তাহলে মাত্র ১% লোকের জন্য সেক্স/লিঙ্গ-এর ধারণাই বদলে কেন ফেলতে হবে? কারও কারও হাতে ৬টা আঙুল থাকতে পারে। তাই বলে, হাতের ধারণা (৫ আঙুলবিশিষ্ট) বদলে দিতে হবে? এজন্য বলা যৌক্তিক যে, হাতের কোনো আঙুল হয় না? তুমি যতগুলা ভাবো, তোমার আঙুল ততগুলাই? এর ফলে কেউ ভাবছে, তার আঙুল ৩টা, অতএব দুটো আঙুল কেটে ফেলার জন্য সে সার্জারি করাচ্ছে?

বরং সমাধান তো এটাই যে এই ১% কেই ৯৯% এর মাঝে মেইনস্ট্রীমিং করাতে হবে। স্বাভাবিক জীবনে ফেরাতে হবে। অথচ সমাধান না করে সমস্যাকেই মেইনস্ট্রীমিং করার জন্য নিত্যনতুন থিওরি দেয়া হচ্ছে। যাতে সমস্যা আরও ছড়িয়ে পড়ে। এজন্য থিওরি দিয়ে সেক্স/লিঙ্গের ধারণাই বদলে দেয়া হল। লিঙ্গকে দুইভাগ করে বলা হল, জন্মলিঙ্গের কোন ভূমিকাই নেই কর্মলিঙ্গের উপর। কর্মলিঙ্গ বেছে দেয় সমাজ। সমাজ মানিনা, নিজেই নিজের কর্মলিঙ্গ বেছে নিব আমরা। সৃষ্টিকর্তা আমাকে ভুল শরীরে সৃষ্টি করেছেন। ইত্যাদি।

সব সমস্যার গোড়া হল, এই লিঙ্গের ধারণাকে বদলানো। এর ফলেই জন্ম নিয়েছে গে, লেসবো, ট্রান, নারীবাদের মতো বিকৃত মতাদর্শগুলো। মানুষের সেক্স/জন্মলিঙ্গ থেকে জেন্ডার/ কর্মলিঙ্গ আলাদা করে ফেলা, জেন্ডারকে স্বাধীন ঘোষণা করা-টাই কেন্দ্রীয় সমস্যা।

আর এই শব্দটা invent (নট ডিসকভার) করেছে ড. জন মানি। এরকম আরও বেশকিছু শব্দ/ভাষা তিনি তৈরি করেন, যা পশ্চিমে 'যৌনবিপ্লব' শুরু।করে দেয়।

এইবার মজার কথাটা শোনাই। সব নাটের যিনি গুরু, তিনি নিজেই ছিলেন 'বাইসেক্সুয়াল'। ['কুইয়ার' লেখক টেরি গোল্ডি, The man who invented gender]। একাধিক সাক্ষাৎকারে, বইয়ে তিনি সজ্ঞানে স্বীকার করেছেন, তিনি নারী-পুরুষ উভকামী। তিনি যৌনস্বাধীনতায় বিশ্বাসী।

অথচ পুরো সায়েন্টিফিক একাডেমিয়া জন মানির মাত্র ১০ জনের উপর করা রিসার্চকে 'প্যারাডাইম' হিসেবে নিয়ে নিল। ৪০ বছর ধরে সকল ডেটাকে ব্যাখ্যা করা হল এক সমকামী, উভকামী, ব্যভিচারকামী লোকের মতকে ধ্রুব ধরে নিয়ে। দেশে দেশে পলিসি করা হয়ে গেল। কেউ একে 'বায়াস' বললো না। কেউ বললো না, জন মানি নিজের মনমানসিকতাকে থিওরি বানিয়ে ছেড়েছেন।

একইভাবে ১৯৯২ সালে সমকামী বিজ্ঞানী  Dean Hammer যখন সমকাম জিন আবিষ্কার করল। হৈ হৈ রৈ রৈ পড়ে গেল মিডিয়া ও একাডেমিয়ায়। দেশে দেশে সমকামীদের পক্ষে পলিসি করা হয়ে গেল। ২০১৬ সালে গবেষণায় এলো, সমকাম জিন আসলে নেই। তাতে কি? ততদিনে সমকামের পক্ষে সব আদায় করা শেষ। শত শত বাচ্চা পাঠ্যপুস্তকে ওসব পড়ে সমকামী হয়ে গেছে ততদিনে। কেউ বললো না, একজন গে নিজের মতকে প্রতিষ্ঠা করে ছেড়েছে বিজ্ঞানের নামে।

গত ২০ বছর মাত্র জন মানির থিওরিকে চ্যালেঞ্জ করা হচ্ছে। তাতে কিচ্ছু যায় আসে না। মানির থিওরির দরুন ৪০ বছরে কোটি কোটি মেয়ে নারীবাদী হয়েছে, লেসবিয়ান হয়েছে। নিজের সুন্দর নারীসুলভ সংসার হারিয়েছে, প্রশান্তির জীবন ছেড়ে পুরুষের সাথে ইঁদুরদৌড়ে মেতে ধুঁকে ধুঁকে জীবন পার করেছে। কোটি কোটি ছেলে সমকামী, কুইয়ার, ট্রান্সগন্ডার হয়েছে, লিঙ্গ কেটে আপসোস করেছে, এইডসে ভুগে জীবনলীলা সাঙ্গ করেছে।

'জেন্ডার' শব্দটাই পশ্চিমা (অ)সভ্যতার হেজিমনির (আগ্রাসনের) হাজারও অস্ত্রের সবচে বড় অস্ত্র। লিবিয়ার আলিমগণ সম্প্রতি সম্মিলিত ফতোয়া দিয়েছেন: 'জেন্ডার' শব্দটা ব্যবহার হারাম। এই শব্দটা মুসলিম সমাজে বিকৃত যৌনতার দুয়ার খুলে দেয়। মুসলিম নারীকে পশ্চিমা পুঁজিবাদের পণ্যে পরিণত করে। আল্লাহর সৃষ্টিকে বিকৃত করাকে। বৈধতা দেয়। আল্লাহর ভুল সৃষ্টিকর্তা বলে দাবির জায়গা দেয়। এই শব্দ ব্যবহার কুফর।

লিবিয়ার আলিমদের ফতওয়া

সম্মানিত আলিমগণ, শব্দটা নিয়ে ইসলামের অবস্থান স্পষ্ট করুন। শব্দটা দেখলেই যেন অন্তর্নিহিত কুফর টের পায় মানুষ।