বৃটিশরা ভারত শাসনের নানান সময় জুড়ে ৫৫০-৭০০টা স্বাধীন রাষ্ট্র ছিল, যা বৃটিশদের দ্বারা নয়। শাসিত হত রাজাদের দ্বারা। যারা বৃটিশের আনুগত্য সাপেক্ষে স্বাধীনভাবে শাসন করত। এদেরকে বলা হত Princely state. বর্তমান ভারতের ৪০%-ই এই রাষ্ট্রগুলো। বাকি ৬০% ছিল ‘বৃটিশ ভারত’।

প্রিন্সলি স্টেইট

এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যগুলোকে বলা হত Salute state. এই রাজারা নানান সংখ্যক গান-স্যালুট পেতেন (রয়াল নেভির তোপধ্বনি), এই সংখ্যার ভিত্তিতে তাদের মর্যাদা নির্ধারিত হত। ২ থেকে ২১টা পর্যন্ত। হায়দারাবাদ ও কাশ্মীর পেত সর্বোচ্চ সম্মান ২১টা তোপধ্বনি, এই রাজারা ছিল অনারারি জেনারেল মর্যাদার। অন্যগুলো কেউ ব্রিগেডিয়ার, কেউ লেঃকর্ণেল মর্যাদার। 

হলুদ : বৃটিশ-শাসিত অংশ, নীল: প্রিন্সলি স্টেট

১৯২০ সালে এই রাজাদের নিয়ে রাজা ৫ম জর্জ গঠন করে Chamber of Princes.

একই বছর মহাত্মা গান্ধির কংগ্রেস ‘স্বরাজ’ ঘোষণা করে এবং এই প্রিন্সদেরকে আহ্বান করে নিজ নিজ এলাকায় জনবান্ধব সরকার গঠনের।

১৯২৯ সালে জওহরলাল নেহেরুর চেষ্টায় কংগ্রেস ঘোষণা করে, এই স্টেটগুলোর জনগণই সিদ্ধান্ত নেবে এগুলোর ভবিষ্যত কী হবে।

১৯৩৭ সালে গান্ধী প্রস্তাব করে বৃটিশ-শাসিত ভারত এবং এই প্রিন্সলি স্টেটগুলো মিলে একটা ফেডারেশন গঠনের। যেখানে থাকবে একটা কেন্দ্রীয় ভারত সরকার। (ভারত ইউনিয়নের পূর্বরূপ)

১৯৪৬ সালে নেহেরু খেয়াল করে বৃটিশ ভারতীয় আর্মির সাথে যুদ্ধে পেরে উঠবে, এমন একটাও প্রিন্সলি স্টেট নেই।  

১৯৪৭ এ স্বাধীনতার পর ভারতের ১ম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও উপপ্রধানমন্ত্রী সরদার বল্লভ ভাই প্যাটেল (বিজেপি যার মূর্তি বানিয়েছে ৩০০০ কোটি রূপি দিয়ে) প্রাচীন চাণক্য কূটনীতি প্রয়োগ করে: সম (আলোচনা), দান (উপঢৌকন), ভেদ (মৌখিক জবরদস্তি), ধন্দ (অস্ত্র)।

অধিকাংশ প্রিন্স প্রথম দুই কৌশলে ভারত ইউনিয়নে যোগ দেয়। বিশেষ করে ছোট ছোট রাজ্যগুলো এবং হিন্দুপ্রধান হিন্দুরাজাশাসিত স্টেটগুলো। প্রাথমিকভাবে এসব প্রিন্সদের বিপুল আর্থিক সুবিধা দেয়া হতো (পরে ইন্দিরা গান্ধী সব বাতিল করে)। নিজ নিজ রাজ্যে গভর্নর হিসেবে রেখে দেয়া হতো। 

হায়দরাবাদ, কাশ্মীর, যোধপুর, ভূপাল, জুনাগড়, ট্রাভানকোর

৩টি বড় বড় রাষ্ট্রকে ৩য় পদ্ধতি (ভয়ভীতি দেখিয়ে বলপূর্বক) ভারত ইউনিয়নে যোগ দিতে বাধ্য করা হয়। 

যোধপুর: 

বা মারওয়ার রাজ্য  হিন্দুপ্রধান হিন্দুরাজাশাসিত হলেও পাকিস্তানে যোগ দিতে চেয়েছিল ভৌগোলিক সুবিধার কারণে। 

ভূপাল:

মুসলিম শাসিত হিন্দুপ্রধান এলাকা (৩০% মুসলিম)। নবাব হামিদুল্লাহ খান স্বাধীন থাকতে চেয়েছিল। হিন্দু নেতারা শঙ্করদয়াল শর্মার নেতৃত্বে ভারতপন্থী আন্দোলন গড়ে তোলে। চাপে পড়ে ১৯৪৯ সালে সবার শেষে ভারতে যোগ দেয় ভূপাল রাজ্য। 

ট্রাভানকোর: (থিরুভিথাঙ্কুর)

কোনোটাতেই যুক্ত না হয়ে স্বাধীন হিসেবে থাকতে চেয়েছিল। পরে স্বাধীনতার মাস্টারমাইন্ড প্রধামন্ত্রী স্যার সিপি রামস্বামী আইয়ারকে হত্যাচেষ্টা ও নানাভাবে চাপ দেবার দরুন ভারত ইউনিয়নে যোগ দিতে বাধ্য হয়। 

৩টি রাজ্য সামরিক হস্তক্ষেপে দখল হয়।

হায়দারাবাদ:

হিন্দুপ্রধান মুসলিমশাসিত এলাকা। স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে থাকতে চেয়েছিল। জাতিসংঘে প্রতিনিধিও পাঠিয়েছিল। 

ভিতরে তেলেঙ্গানা বিদ্রোহ উস্কে দিয়ে সেপ্টেম্বর, ১৯৪৮ সালে ভারতীয় সেনা দিয়ে দখল করা হয়। ৪০,০০০ থেকে ২ লক্ষ মানুষ নিহত হয়। 

কাশ্মীর :

হিন্দুশাসিত মুসলিমপ্রধান অঞ্চল। প্রথমে রাজা রাজা পাকিস্তানের সাথে একটা স্থিতাবস্থা চুক্তি করে। ভিতরে মুসলিম নির্যাতনের খবরে পাকিস্তানি উপজাতিরা কাশ্মীর আক্রমণ করে। রাজা ভারতীয় আর্মির সাহায্য চায় ১৯৪৭ সালের শেষে। 

জুনাগড়:

হিন্দুপ্রধান মুসলিমশাসিত এলাকা। নবাব পাকিস্তানে যুক্ত হতে চুক্তি সই করে ফেলেছিল। ফেব্রুয়ারি ১৯৪৮ সালে আর্মি দিয়ে ভারত দখল করে গণভোট দেয়। পাকিস্তান আজও নিজের দাবি করে। 

সিকিম: 

১৯৭৫ সালে ভারতীয় আর্মি দখল করে গণভোট দেয়। 

ছোটো ছোটো মুসলিমপ্রধান রাজ্যগুলো ছিল:

রামপুর রাজ্য: ৮০% সুন্নী মুসলিম (শিয়া প্রিন্স রাজা খান) ১৯৪৯ সালে ভারত দখল করে। এখন হিমাচল প্রদেশের অংশ।

Banganapalle State: এখন তেলেঙ্গানার অংশ (শিয়া রাজা) । ১৯৪৮ সালে সাইন করে ভারত ইউনিয়নে যোগ দেয়।

Malerkotla রাজ্য: ৭০% মুসলিম। (সুন্নী রাজা) ১৯৪৭-এ ভারতে নিয়ে নেয়া হয়। পাঞ্জাবের অংশ।