"স্ত্রী চাকরি করলে স্বামীর হক আদায় হয় না।"
আমরা চেষ্টা করব ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি ছাড়াই কথাটাকে বিবেচনা করতে।

বিয়ের উদ্দেশ্য সমস্ত কালচারেই যৌনতার বৈধতা। বৈধ যৌনসম্পর্ক বিয়ের ১ নং উদ্দেশ্য। এটুকু যে অস্বীকার করে, সে আর সুস্থ অবস্থায় নেই। সুতরাং স্বামী-স্ত্রীর পরস্পরের ১ম কমিটমেন্ট পরস্পরের যৌনচাহিদা পূর্ণ করা এবং বাইরে না করা। আমরা দেখবো সারা দুনিয়ায় কী অবস্থা এবং এর পর কারণ নির্ধারণ করব।
১.
গত ১০ বছরে একাধিক স্টাডিতে এসেছে যে, সারা দুনিয়ায় যৌনমিলন হ্রাস পাচ্ছে। রিসেন্ট এক মার্কিন স্টাডি জানাচ্ছে ২০০৯-২০১৮তে সকল প্রকার (বৈধ-অবৈধ) পার্টনার-সেক্স হ্রাস পেয়েছে। [Guardian]
২.
ব্রিটেনে বিবাহিত ও লিভ-টুগেদার কাপলদের মাঝে সেক্স কমে গেছে। রিসার্চের প্রস্তাব হল, মূলত অতিব্যস্ত জীবনযাপন এর কারণ।
৩৪০০০ মানুষের ডেটা নেয়া হয়েছে ৩টি ধাপে। স্টাডির নাম Natsal (national surveys of sexual attitudes and lifestyles). ফলাফল এসেছে, ২০০১ থেকে ২০১২ সালে সকল বয়েসী মানুষের সেক্সের হার কমেছে, বিশেষ করে ২৫+ এবং বিবাহিত মানুষদের। [Guardian] [সমীকরণ-১]

শুধু ব্রিটেন না। অস্ট্রেলিয়া, ফিনল্যান্ড, জাপান এবং আমেরিকাতেও একই অবস্থা। যে পরিমাণ সেক্স হচ্ছে, তাতে তারা সন্তুষ্ট নন। ৫১% নারী ও ৬৪% পুরুষ জানিয়েছে তারা আরও বেশি বার করতে চায়, কিন্তু হয়নি। এটা ২০১২ সালে। ২০০১ সালে এটা ছিল ৩৯% নারী, ৫১% পুরুষ। অর্ধেকের কম নারী-পুরুষ সপ্তাহে একবার করতে পারছে। ২৯% নারী-পুরুষ জানিয়েছে, গত একমাসে তারা একবারও করেনি। পেপারটি জানাচ্ছে,

‘বয়সের রেঞ্জ ও বৈবাহিক অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে এর ব্যাখ্যা হতে পারে, আধুনিক জীবনের স্ট্রেস ও ‘ব্যস্ততা’।

কর্মস্থল, ফ্যামিলি লাইফ সব উল্টেপাল্টে (juggle) গেছে। “sandwich generation” এতো বেশি সংগ্রাম করছে যে, সেক্স করার টাইমই পাচ্ছে না’।

আবার দেখি, সাংবাদিক লেখিকা ড. Myriam François বলছেন:

সেক্স কমে যাওয়ার অর্থনৈতিক ও পলিটিক্যাল ব্যাকগ্রাউন্ড কী? অন্য সব কারণের চেয়ে বড় কারণ যেটা সেটা হল, আধুনিক জীবন যে উদ্বেগ-টেনশন আমাদেরকে দিয়েছে, লাইফস্টাইলের যে উচ্চমূল্য, তার ফলে দৈনিক আমরা অতিশ্রমে-ধকলে (stress) এতোই পরিশ্রান্ত হয়ে ফিরি যে, সেক্সের মুড থাকে না।

[iai.tv]

তাহলে কালপ্রিট পাওয়া গেল: মহাব্যস্ততা। [সমীকরণ-২] কে কী নিয়ে ব্যস্ত? পুঁজিবাদ আমাদের সময় কেড়ে নিয়েছে। আমাদের পুরো দিন, পুরো শ্রম, পুরো জীবনীশক্তি শুষে নিচ্ছে। নারী-পুরুষ উভয়েরই। এতোটুকু পর্যন্ত ঠিক আছে। এবার আসুন সাইকোবায়োলজিতে।

এই যে ধকল (stress), পুরুষ বাই ডিফল্ট এটা নেবার জন্যই সৃষ্টি। স্ট্রেস হরমোন কর্টিসল এবং পুরুষের টেস্টোস্টেরোন পরস্পরের এন্টি। কর্টিসল T-কে কমায়, আবার T কমায় কর্টিসলকে। রেগুলার সেক্স T-কে বাড়ায়, পুরুষকে আরও স্ট্রেস নিতে শক্তি যোগায়।
আর নারীতে T অতিসামান্য। পুরুষে ২৮০-১১০০ ন্যানোগ্রাম/ডেসিলিটার। নারীতে ১৫-৭০ ন্যানোগ্রাম/ ডেসিলিটার। নারী হরমোন ইস্ট্রোজেন-প্রোজেস্টেরোনের মাসিক ওঠানামা বরং স্ট্রেস তৈরি করে আরও। ফলে নারীর শারীরিক প্রক্রিয়া স্ট্রেস সামলানোর কম উপযোগী। যার দরুন:

  • পুরুষের চেয়ে স্ট্রেসে থাকা একজন নারীর শারীরিক ক্ষতি বেশি হয়, মানসিক অসুখও বেশি হয়। [Stress and your health, Office on Women’s Health, U.S. Department of Health and Human Services]
  • স্ট্রেসের প্রভাবে লক্ষণগুলো নারীদের বেশি প্রকাশ পায়। কারণ, একই স্ট্রেসে নারীদের স্ট্রেস-হরমোন কর্টিসল বেশি বের হতে থাকে (Verma, 2011)
  • ফলে টেনশন-জাতীয় মাথাব্যথা ও মানসিক রোগগুলো নারীদের বেশি হয়। (Hammen, 2009)
  • কমবয়েসী নারীদের হার্টের সমস্যাগুলো মূলত হার্টের ওপর এই স্ট্রেসের কারণেই হয়। (Vaccarino, 2014)
  • লম্বা সময় নিয়ে স্ট্রেস থেকে IBS নামক অসুখ হতে পারে। পুরুষের চেয়ে নারীদের এই রোগের হার দ্বিগুণ। (Grundmann , 2010)
  • স্ট্রেসের কারণে মুটিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা নারীদের অনেক বেশি পুরুষের চেয়ে। (Michopoulos, 2016)

তার মানে নারীকে অতিরিক্ত স্ট্রেস দিলে সমস্যা [সমীকরণ-৩]। নারীর শরীর শেষ হয়ে যাবে। অথচ নারীর এই স্ট্রেসটা কমানো যেত। কীভাবে?
নারীদের স্ট্রেসের মূল কারণ :

  • অফিসে ও বাসায় নারীর ‘দ্বৈত ভূমিকাই’ তাদের কর্মস্থলে পুরুষের চেয়ে বেশি স্ট্রেস অনুভব করার মূল কারণ। (Prasad, 2016)
  • পুরুষের মাঝে কাজ করতে সে বেশি স্ট্রেস ফিল করে, সেখানেই তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ২০১২ সালে ২২,০০০ নারীর ওপর এক রিসার্চে এসেছে, যেসব নারীদের চাকুরি-কেন্দ্রিক স্ট্রেস (job-related stress) বেশি, তাদের ৪০% বেশি সম্ভাবনা হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোক (cardiovascular event) হওয়ার [Alexandra Sifferlin (August 25, 2015) Women in Male-Dominated Jobs Have More Stress, TIME]
  • নারী কর্মকর্তারা বেশি স্ট্রেস, উদ্‌বেগ ও মানসিক সমস্যার সম্মুখীন [Why Women Feel More Stress at Work (Harvard Business Review 2016)]
  • ব্রিটেনের মতো দেশেই ৭৯% নারী কর্মক্ষেত্রের স্ট্রেসে ভুগছেন, ৭৮% নারী কর্মজীবীর ঘুমে সমস্যা, মোটের ওপর ৮৭% নারী চাকুরি নিয়ে স্ট্রেসে আছেন বলে জানিয়েছেন। [Louise Chunn (Mar 26, 2019) Women Are at Breaking Point Because of Workplace Stress : Wellbeing Survey from Cigna, Forbes.com]

খুবই স্পষ্ট যে, কর্মক্ষেত্র নারীকে এই এক্সট্রা স্ট্রেসটা নিতে বাধ্য করছে [সমীকরণ-৪]। ক্ষমতায়ন, স্বাবলম্বন, নিজের পরিচয় ইত্যাদি নামে তাকে টেনে এনেছে পুরুষের সমান কর্টিসলের থাবায়, যা নিতে তার শরীর উপযোগী না।

সমীকরণ-১,২,৩,৪ থেকে পাই,
সারা দুনিয়ায় সেক্স কমে যাবার মূল কারণ ‘নারীর স্ট্রেস’। কারণ স্ট্রেসের লক্ষণ নারীতে প্রকাশ পায় বেশি। ক্লান্তি-অবসন্নতা-মুড অফ ইত্যাদি। পুরুষ মানুষকে সেক্সে টেনে আনা নারীর বাঁ হাতের খেল, সে পুরুষ যতই ক্লান্ত হোক। কিন্তু নারী অবসন্ন হলে তার মুড জাগানো প্রায় অসম্ভবের মত। উলটে ম্যারাইটাল রেপ-টেপের ভয় হাবিজাবি তো আছেই।

সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা হয়েছে জাপানে। পশ্চিমা মডেল হুবহু প্রাচ্যে কপিপেস্ট করলে কী হয়, জাপান তার আদর্শ দৃষ্টান্ত। আত্মহত্যার হার, বিবাহিতদের মাঝে সেক্স-হীনতা (sex-free marriage), ভোগবাদিতা, কর্ম-অবসেশন।

সুতরাং স্বামীর ইচ্ছের বিরুদ্ধে কোনো নারী চাকুরি করলে এটারই সম্ভাবনা যে সে স্বামীকে দেবে একটা ‘সেক্স-বিহীন’ বা ‘কোয়ালিটি সেক্স-বিহীন’ দাম্পত্যজীবন। অফিস সেরে এসে হয় স্বামীর আহ্বানে সাড়া দেবার শক্তি থাকবে না। কিংবা পড়ে থাকবে তক্তার মত। কাফিররা তো পর্নে যাবে, ব্রোথেলে যাবে, গার্লফ্রেন্ডে যাবে। আর মুমিন মুসলমান না পারবে মাসনা করতে, না পারবে ভিপিএন-এ যাইতে।

সুতরাং, যদি মেশিনের না, ‘মানুষের জীবন’ কাটাতে চান, সারাদিন স্ট্রেস নিয়ে ঘরে ফিরে আরেকটা ক্লান্ত মানুষকে দেখতে না চান, যদি চান প্রতিদিন রোমান্টিক সুখস্মৃতি যা নিমেষেই ভুলিয়ে দেবে সব ধকল, পরের দিনের জন্য দেবে প্রফুল্লতা। গৃহিণী নারীকে বিবাহ করুন, স্ত্রীকে মেন্টালি স্ট্রেস-ফ্রী ফুরফুরে রাখুন। বাইরের দুনিয়ার এতো হ্যাপা তাঁর মাথায় দেবেন না। যিনি দুপুরে ঘুমাবেন, আপনার জন্য প্রিয় খাবার রান্না করবেন। সেজেগুজে আপনার জন্য অপেক্ষায় থাকবেন। কর্মক্লান্ত খিটখিটে মেজাজ না, প্রেমাসক্ত প্রিয়বচনে আপনার সারাদিনের ক্লান্তি ভুলিয়ে পরের দিনের জীবনযুদ্ধের জন্য আপনাকে তৈরি করে দেবেন।

পুরুষের লোভ নারীকে ঠেলে দেয় এই ক্লান্ত-বিধ্বস্ত অনারী-সুলভ জীবনে। চাকুরিজীবী স্ত্রী যে ২০ হাজার কামাবে, ওটা আপনি নিজে এক্সট্রা কামান, খাটেন। নিজের নারীকে রাখেন সুখে-অবসরে। গায়রতওয়ালা মুসলিম পুরুষ এটাই করবে। আর বেগায়রত পুরুষ বৌ খাটাবে, বউয়ের কামাই খাবে।

[অনেক বোন আছেন যাদের চাকরি না করে উপায় থাকে না। বাবাহীন, বৃদ্ধ পিতার বড় মেয়ে ইত্যাদি। তাঁদের পর্দার সাথে চাকরির অনুমতি ইসলাম দেয়। খিলাফত থাকলে সেটারও দরকার ছিল না। নেই, কী আর করা। এই পোস্ট-পিক কিছুই তাঁদের উদ্দেশ্যে না। আমাদের এইসব আলাপের উদ্দেশ্য সমাজের সামগ্রিক মাইন্ডসেট যে নারীকে চাকরি করতে হবে, সেটার বিরুদ্ধে]

চলবে ইনশাআল্লাহ
(পরের পর্ব: সন্তানের হক আদায় হয় না)