মিথ্যুক খুশি আপা আবারও মিছে কথা বলে আপনার সন্তানের মন-মগজ নষ্ট করছে।

ইতিহাস ও সমাজ বিজ্ঞান বই, ৭ম শ্রেণী

খুশি আপার এসব অবৈজ্ঞানিক মিথ্যা কথা (নারী-পুরুষের বৈশিষ্ট্যের পার্থক্যের কোনো ভিত্তি না থাকার বয়ান) বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত কোন বিষয় নয়। এটা সমকামী এক্টিভিস্টদের রাজনৈতিক অবস্থান। যা দ্বারা তারা ১৯৭০-২০০০ সাল ব্যাপী সকল আন্তর্জাতিক সংগঠন, বৈজ্ঞানিক একাডেমিয়া, মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি, পশ্চিমা দেশগুলোর সরকার ব্যবস্থাকে প্রভাবিত করে আসছে। আন্তর্জাতিক সহযোগিতার শর্ত হিসেবে, বিজ্ঞানের গবেষণার মোড়কে, বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে, মিডিয়ার মাধ্যমে, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের নামে, মানবাধিকারের নামে নিজেদের এই বিকৃত এজেন্ডা পুশ করেছে ও করছে।

খুশি আপা বাচ্চাদের মনে যে অবৈজ্ঞানিক গার্বেজ ঢুকাচ্ছে, তা অলরেডি গত ২০ বছরে শত শত রিসার্চে ভুল প্রমাণিত হয়ে গেছে। লাস্ট লাইনে ফাতেমার কথাটা খেয়ার করুন, এখন বুঝতে পারছি, ছেলেমেয়ের চেহারা, আচরণ, কাজ বা অন্যান্য বৈশিষ্ট্যের কোন স্বতঃসিদ্ধ নিয়ম নেই। মানে, নারীত্ব-পুরুষত্ব এর প্রকাশ কোন স্বতঃসিদ্ধ বিষয় নয়, সামাজিকভাবে চাপিয়ে দেয়া বিষয়। মেয়েদের সাজগোজ করা, লজ্জা পাওয়া— এগুলো সামাজিকভাবে চাপিয়ে দেয়া বিষয়। এই কথাটা আজ কুসংস্কার ছাড়া কিছু না। তাদের এই কুসংস্কার ভুল প্রমাণ হচ্ছে গত ২০ বছর ধরে। বিজ্ঞানের আধুনিক গবেষণাগুলো বলছে, নারীর ও পুরুষের আচরণে প্রচুর পার্থক্য রয়েছে, যা সমাজের শেখানো নয়। বরং মায়ের পেটেই ব্রেইনের গঠনে উভয়ের পার্থক্য হয়ে যায় (sexual dimorphism)। ব্রেইনের গঠনে পার্থক্যটাই পরে আচরণে, রুচিতে, পছন্দে, আগ্রহে পার্থক্য তৈরি করে। চলুন দেখি রিসার্চগুলোর সাথে পরিচিত হই। রিসার্চ লিংকগুলোও দেয়া আছে ফুটনোটে। আমি কেবল ২০১০ সালের পরে যে রিসার্চগুলো হয়েছে, সেগুলোই আনার চেষ্টা করেছি।

পুরুষ ও নারীর পার্থক্যগুলো লক্ষ্য করুন ও মিলিয়ে নিন

  • নারীর ব্রেনের দুপাশের মাঝে অধিক কানেকশন।[1] ফলে নারীর ইন্ট্যুইশন পাওয়ার আছে। না-বলা কথা বুঝে ফেলা, না-দেখা জিনিস আঁচ করার ক্ষমতা। (Ingalhalikar 2014)
  • যেকোনো কাজে পুরুষের মগজে একটা নির্দিষ্ট জায়গা এক্টিভ হয়। মানে নির্দিষ্ট জায়গা দিয়ে নির্দিষ্ট কাজ করে; কিন্তু নারীর মগজে ব্যাপারটা এত কাট-কাট না, একটা কাজে ব্রেইনের নানান জায়গা একসাথে অংশ নেয়।[2] (Shaywitz et al. 1995; Pugh et al. 1996; Jaeger et al. 1998; Clements et al. 2006, Chen et al. 2007)
  • নারীর কথা বলার ক্ষমতা বা নিজেকে প্রকাশের ক্ষমতা অনেক বেশি।[3] পুরুষ নিজেকে প্রকাশ করতে পারে কম। যেমন নারী সহজে কাঁদতে পারে, পুরুষ পারে কম। (Kurth, 2017)
  • নারীর অক্সিটোসিন হরমোন বন্ধন তৈরি করে (Magon et al. 2011))।[4] এজন্য নারীর সহমর্মিতা, সহানুভূতি, সম্পর্ক গড়া, টিকিয়ে রাখার ইচ্ছা অনেক বেশি। বিপরীতে পুরুষের টেস্টোস্টেরোন বাচ্চা-পালার বিরোধী (Kuo et al. 2016)।[5]
  • পুরুষ শিশুর টান বস্তুর প্রতি (অবজেক্ট)। নারীশিশুর টান চেহারার প্রতি (সাবজেক্ট)।[6] হাসি দেওয়া, কথা বলা এই সামাজিক ব্যাপারগুলো নারীশিশুর আগে আসে পুরুষের চেয়ে। (Connellan et al. 2000)। এজন্য মেয়েরা মানুষ সম্পর্কিত পেশা ও সাবজেক্ট বেছে নেয় (ডাক্তারি, শিক্ষকতা)। ছেলেরা বেশি বেছে নেয় যন্ত্র/বস্তু সম্পর্কিত পেশা ও সাবজেক্ট (প্রকৌশল, STEM সাবজেক্ট)
  • কাজের সময় পুরুষ থাকে ফোকাসড। পুরুষ যা করে, খোপ খোপ[7] ব্রেইন বলে ডিফোকাস হয় কম। বিপরীতে, নারী মাল্টিটাস্কিং-এ পারদর্শী,[8] যা সন্তান লালনের জন্য জরুরি। এটা হতে গিয়ে আবার আরেক দিকে সমস্যা। মাল্টিটাস্কিং-এর জন্য ব্রেইনের বিভিন্ন কাজের স্থান ওভারল্যাপিং বলে, ডিফোকাস হয়ে যায় সহজে।[9] (Stoet, 2013, 2017)
  • নারী যখন দেখে অনেক ডিটেইলস দেখে, আপাত নিষ্প্রয়োজন জিনিসও দেখে এবং মনে রাখে।[10] পুরুষ স্থানের বিবরণ মনে রাখে বেশি (spatial memory)। নারী মনে রাখে বেশি কথাবার্তা (verbal memory). (Beeman and Bowden, 2000; Fink et al., 1996, 1999. Cahill and van Stegeren, 2003, 2004; Kilpatrick et al., 2006.)
  • ফলে দ্বিধা, কনফিউশন পুরুষের চেয়ে বেশি৷[11] এবং এটাই নারীর শক্তি। (Stoet 2017)
  • নারী পুরুষের চেয়ে আবেগতাড়িত (impulsive)।[12] নারীর মস্তিষ্কের ফাংশন ওভারল্যাপিং বলে আবেগ ও যুক্তি আলাদা করে বুঝতে পারে কম। পুরুষের আবেগের জায়গা আলাদা, যুক্তির জায়গা আলাদা। (Marazziti et al., 2010)
  • নারী সহজে প্রভাবিত হয়, সহযোগিতা করে, মেনে নেয়, রিসেপ্টিভ।[13] পুরুষের টেস্টোস্টেরোন প্রভাব নেয় না, বিদ্রোহ করে। মেইল ইগো তৈরি করে।[14] (Tajima-Pozo ২০১৫)

সুতরাং, এগুলোর কোনটাই সমাজের চাপিয়ে দেয়া নয়। বরং নারী-পুরুষের শরীরী গঠনেই সব নকশা ঠিক করে দেয়া, যা সে মায়ের পেট থেকেই নিয়ে দুনিয়াতে এসেছে। নারী বৈশিষ্ট্য ও পুরুষ বৈশিষ্ট্যের স্বতঃসিদ্ধ নিয়ম রয়েছে এবং তা ৯৯% মানুষের ক্ষেত্রেই ঠিক।


[1] Ingalhalikar M, Smith A, Parker D, et al. : Sex differences in the structural connectome of the human brain. Proc Natl Acad Sci U S A. 2014;111(2):823–8.

কথা বলা সময় পুরুষের ব্রেইনের একপাশে নির্দিষ্ট জায়গা উজ্জ্বল, মেয়েদের ব্রেইনে দুইপাশেই বিস্তৃত এলাকা উজ্জ্বল।

[2] একটা সমস্যা সমাধানের সময় পুরুষের মগজের একটা জায়গাই এক্টিভ, স্ক্রিনে উজ্জ্বল। নারীদের মগজের নানা জায়গা এক্টিভ। (Shaywitz et al. 1995; Pugh et al. 1996; Jaeger et al. 1998; Clements et al. 2006, Chen et al. 2007)

পরবর্তী সময়ে ২০১৪ সালে University of Pennsylvania-র গবেষকরা ৪২৮ জন যুবক ও ৫২১ জন যুবতীর ব্রেইন ইমেজিং করেন। বার বার পাওয়া যায়, নারীদের ব্রেইনের দুইপাশের সমন্বিত এক্টিভিটি খুবই শক্তিশালী। বিপরীতে পুরুষেরটা একটা অংশের ভেতরে শক্তিশালী।

[3] Kurth F, Jancke L, Luders E : Sexual dimorphism of Broca’s region : More gray matter in female brains in Brodmann areas 44 and 45. J Neurosci Res. 2017;95(1–2):626–32.

[4] মা-শিশু, স্বামী-স্ত্রী, ইয়ার-দোস্ত ইত্যাদি সকল যুগল বন্ধনের জন্য দায়ী এই হরমোন। আদর করে একে ডাকা হয় bonding hormone, cuddle hormone (জড়িয়ে ধরা) কিংবা love hormone. যৌনমিলন, লিঙ্গোত্থান, বীর্যপাত, গর্ভধারণ, প্রসব, বুকের দুধ তৈরি, মাতৃত্বের অনুভূতি, সামাজিক বন্ধন, স্ট্রেস দূরীকরণ এবং আরও বিভিন্ন কাজে এই হরমোন অংশ নেয়। (Magon et al. 2011))

[5] ২০০৫-২০০৯ সালের মাঝে ৪৬৫ জন পুরুষের ওপর গবেষণা হয়। দেখা গেছে পুরুষের সন্তান প্রতিপালনের সাথে টেস্টোস্টেরোন ৩০% কমে যাওয়ার সম্পর্ক রয়েছে। ২০১৬ সালে ১৭৫ জন পুরুষের ওপর আরেকটি রিসার্চে (Kuo et al. 2016) এসেছে, সন্তানের কান্নার প্রতি পুরুষের রেসপন্স কেমন হবে, তা টেস্টোস্টেরোনের লেভেলের সাথে সম্পর্কিত। যাদের হরমোন বেশি তারা বাচ্চার কান্নাকে মনে করেছে বিরক্তিকর, আমার দ্বারা একে থামানো সম্ভব না। যাদের হরমোন কম তারা বেশি সেন্সিটিভ বাবা প্রমাণ হয়েছে।

ANN ARBOR (October 29, 2015), Low testosterone, men’s empathy can determine parenting skills, Michigan News, University of Michigan.

[6] ১০২ জন নবজাতকের ওপর রিসার্চে এটা এসেছে (Connellan et al. 2000)। ৬ মাস বয়সী বাচ্চাদের ক্ষেত্রেও একই ফল এসেছে (Alexander et al. 2009)

[7] কার্যগতভাবে compartmentalized ও specialized. নির্দিষ্ট স্থানই কেবল নির্দিষ্ট কাজে অংশ নেয়। মানে দেখতে পার্টিশন দেয়া নয় কিন্তু।

[8] Stoet, G., O’Connor, D.B., Conner, M. et al. Are women better than men at multi-tasking?. BMC Psychol 1, 18 (2013).

[9] রিসার্চে এসেছে, নারীরা মূল কাজের বাইরের খুঁটিনাটি দিয়ে (task-irrelevant spatial information) ডিফোকাস হয় ছেলেদের চেয়ে বেশি। একে বলা হচ্ছে ‘সাইমন ইফেক্ট’। (Stoet 2017)

নারী-পুরুষে মৌলিক পার্থক্য নেই, এটা প্রমাণ করার চেষ্টা করলেও বহুল আলোচিত আরেক রিসার্চে (Riley et al., 2016) ফাঁকতাল দিয়ে যা বেরিয়ে গেছে তা হলো : Sustained Attentional Control টেস্টে নারীরা Omission error বেশি করে, পুরুষেরা বেশি করে Commission error. মানে পুরুষ রেসপন্স করেছে কিন্তু ভুল করেছে, মানে এটেন্ড করেছে। আর Omission error হলো এটেন্ডই করেনি, মনোযোগই দেয়নি, ডিফোকাস ছিল বলে।

[10] Beeman and Bowden, 2000; Fink et al., 1996, 1999. Cahill and van Stegeren, 2003, 2004; Kilpatrick et al., 2006.

[11] ইস্ট্রোজেন হরমোন এই দ্বিধার (inhibition of prepotent responses) জন্য দায়ী। ইস্ট্রজেন হরমোন যত বেশি, নারী তত বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে স্থিতিশীলতা থেকে নমনীয় হতে থাকে (women are biased towards cognitive flexibility rather than cognitive stability)। (Stoet 2017)

[12] সাধারণভাবে নারী বেশি আবেগপ্রবণ (impulsive) পুরুষের চেয়ে। Barratt Impulsivity Scale-এ ২৭-৫১ বছরের নারীদের আবেগ একই বয়সী পুরুষের চেয়ে বেশি। (Marazziti et al., 2010)

[13] অক্সিটোসিন হরমোনের প্রভাবে। এর নর্মাল লেভেল 1.25–5 pg/mL. মেয়েদের ডিম্বপাতের সময় 5–10 ng/mL মানে দ্বিগুণ হয়ে যায়। (Appendix, Molina ২০১৩) আর পুরুষে থাকে রেঞ্জের নিচের দিকে 1.53 ± 1.18, মেয়েদের থাকে উপরের দিকে 4.53 ± 1.18। (Marazziti ২০১৯)

[14] University College London এর গবেষকরা খুব ইন্টারেস্টিং একটা রিসার্চ করেন মেয়েদের ওপর। ৩৪ জন নারীকে জোড়া জোড়া করে দিয়ে কিছু কাজ দেওয়া হয় তাদের সহযোগিতার মনোভাব বুঝতে। তাদেরকে টেস্টোস্টেরোন সাপ্লিমেন্ট দেওয়া হয়। যেদিন দেওয়া হয়নি সেদিন তাদের সহযোগিতার মনোভাব ছিল স্বাভাবিক। কিন্তু যেদিন টেস্টোস্টেরোন দেওয়া হয়েছে, সেদিন তারা অসহযোগিতা দেখিয়েছে, সঙ্গীর চেয়ে নিজের সিদ্ধান্তেই অটল থেকেছে, ইগো প্রদর্শন করেছে (egocentrically)। (Tajima-Pozo ২০১৫)