আমাদের এই রিপোর্টে আমরা দেখলাম, প্রতি পৃষ্ঠায় পৃষ্ঠায় ভুল তথ্য, বক্র ভাষা ও গ্রাফিক্স ব্যবহার করে আপাত নিরীহ বাক্য দ্বারাও কোনো হীন ভুল চিন্তাকে শিশুমনে পুশ করা হয়েছে। শিশুমনে পশ্চিমা ধর্মহীন চেতনা ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে, যার জন্য পশ্চিমা দুনিয়া নিজেই আজ ধুঁকে ধুঁকে সময় পার করছে। একটা জাতিকে ধর্মবিমুখ সেক্যুলার জাতিতে পরিণত করার মাধ্যমে লাভ কার, ক্ষতি কার? চলুন দেখা যাক। 

(ক) মদপান:

এটা একটা জাতীয় সমস্যা। দেখুন, আমেরিকায় প্রতি বছর কেবল মদপানের কারণে—

  • ৩০ লাখের ৪০% অর্থাৎ ১২ লাখ ভায়োলেন্ট ক্রাইম হয়।
  • ১,৫০,০০০ মানুষ কেবল মারা যায় অতিপানের কারণে।
  • মায়ের এলকোহল পানের কারণে ৪০, ০০০ বাচ্চা ত্রুটি নিয়ে জন্মে (Fetal Alcohol Spectrum Disorders)।
  • বছরে ২২৩ বিলিয়ন ডলার আর্থিক ক্ষতি হয়।

সুতরাং মদপানের বিস্তার জাতিকে সবদিক দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। উন্নয়নে বাধা হয়ে দাঁড়াবে। মদপান কমিয়ে রাখতে পারলে জাতির উন্নয়নের জন্য পজিটিভ। এবার দেখুন গবেষণা কী বলছে:

  • অধার্মিক মানুষের মদপানের প্রবণতা বেশি। সবচেয়ে বেশি যারা নিজেদের এগনোস্টিক দাবি করে (৭৬%)। ধার্মিক মানুষের মদপানের প্রবণতা কম (Burkett and White, 1974)।
  • মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোয় মাথাপিছু মদপান সর্বনিম্ন (<2.5 pure alcohol liters) বা প্রায় সর্বনিম্ন।
  • ইউরোপীয়দের মাঝে গবেষণায়ও এসেছে, মুসলিম দেশ থেকে আসা ইমিগ্রান্টদের মদপানের প্রবণতা কম।

তাহলে ইসলামের মূল্যবোধসম্পন্ন প্রজন্ম গড়ে তোলা জাতির উন্নতির জন্য উচিত, নাকি ইসলামের উপর আস্থাহীন প্রজন্ম গড়ে তোলা উচিত। বাচ্চাদের ধার্মিক মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা উন্নয়নের অনুকূল, নাকি নির্ধমী সেক্যুলার বানানো বেশি অনুকূল? নিজের সন্তানকে পাঁড় মাতাল দেখতে চান, নাকি সুস্থ দেখতে চান। তাহলে কেন কথা বলছেন না এই ধর্মহীন কারিকুলামের ব্যাপারে।

() ব্যভিচার

এটাও একটা জাতীয় সমস্যা। কীভাবে? ব্যভিচারের কারণে—

  • আমেরিকায় ব্যভিচারের কারণে (extra-marrital affair) ৪০% বিবাহিত পরিবার ভেঙে যাচ্ছে (Janus, 1993)।
  • ব্যভিচারের ভিত্তিতে গঠিত পরিবারের (লিভটুগেদার) ৬৫%-ই ভেঙে যাচ্ছে (Osborne, 2007)।
  • ফলে, ইউরোপ-আমেরিকার ৩০-৫০% বাচ্চা ব্যভিচারের ফসল ও নিশ্চিত ব্রোকেন ফ্যামিলির বাচ্চা। যাদের—
    • স্বাস্থ্য ২০% কম।
    • আচরণগত সমস্যা থাকে বেশি।
    • সাইকোলজিস্টের সাহায্য প্রয়োজন পড়ে ৩০০% বেশি।
    • আত্মহত্যা-প্রচেষ্টার সম্ভাবনা দ্বিগুণ।
    • স্কুলে মারপিট ও চুরিচামারিতে লিপ্ত হবার সম্ভাবনা অনেক অনেক বেশি।
    • সিঙ্গেল মা-বাবা ও লিভ-টুগেদারের বাচ্চাদের ৪২%-ই স্কুলে মারপিট করে।
    • স্কুলে রেজাল্ট খারাপ হয় বেশি।
    • স্কুল থেকে ঝরে পড়ার সম্ভাবনা দ্বিগুণ।
    • কারাগারে যাবার সম্ভাবনা নর্মাল পরিবারের চেয়ে ১২ গুণ বেশি।  
    • ভবিষ্যতে কিশোর অপরাধ ও প্রাপ্তপবয়স্ক অপরাধের প্রবণতা (Farrington, 1990)।

একটা জাতির ৩০-৫০% ভবিষ্যত যদি এমন নেগেটিভ বৈশিষ্ট্য ধারণ করে, তা জাতীয় উন্নতির পথে নিশ্চিত অন্তরায়। অর্ধেক জনসংখ্যা ডিপ্রেসড, সাইকো, অপরাধী হয়ে বেড়ে উঠলে তা ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনবে। এ থেকে উত্তোরণের জন্য দেখুন রিসার্চ কী বলছে:

  • ২০১৯ সালের এক ইনফিডেলিটি সার্ভেতে এসেছে, ধর্মকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করার সাথে ব্যভিচার কমার সম্পর্ক আছে। ধর্ম তেমন গুরুত্বপূর্ণ না যারা মনে করে তাদের ২৩% ব্যভিচারে জড়ায়। ধর্মকে যারা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভাবেন, তাদের মাত্র ৯% ব্যভিচারে জড়ায়।
  • ধার্মিকতা যত বেশি, infidelity তত কম  (Fincham & May, 2017)। যত বেশি ধার্মিক তত ব্যভিচারের প্রতি নেগেটিভ এটিচ্যুড (Patrick ২০১৩)
  • ৬ লাখ ২০ হাজার মানুষের ডেটা থেকে Amy Adamczyk (Associate Professor of Sociology at John Jay College of Criminal Justice) পেয়েছেন: এভারেজে মুসলিমরা বিবাহবহির্ভূত সেক্সে জড়ায় সবচেয়ে কম। এরপর হিন্দুরা। (Adamczyk, ২০১২)

সুতরাং, ধর্মের সাথে সম্পর্কহীন, ধর্মকে নিষ্প্রয়োজন ভাবে এমন প্রজন্ম গড়ে তোলাটা জাতির জন্য আত্মহত্যার সমতুল্য। বাচ্চাদের সেক্যুলারায়ন নয়; বরং ধার্মিক হিন্দু ও ধার্মিক মুসলিম হিসেবে বড় করলে সেটাই ভবিষ্যতের জন্য যোগ্য-দক্ষ-সুস্থ মনের প্রজন্ম তৈরি করবে।

() জুয়া

বর্তমানে জুয়া খেলা, ক্রিকেট নিয়ে অনলাইন বেটিং মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছে তরুণদের মাঝে, যা অপরাধ থেকে শুরু করে নানান মানসিক রোগ, অদক্ষ মানুষ তৈরি ইত্যাদি নানান জাতীয় সমস্যা তৈরি করবে। দেখুন, ৫৩টা রিসার্চ রিভিউ করে ব্রিটেনের সরকারি সাইট একটি পেপার পাবলিশ করেছে:

  • ব্রিটেনে জুয়ার ফলে অর্থনৈতিক দায় ১.২৭ বিলিয়ন ডলার (২০১৯-২০ সালে)
  • কোনো এলাকায় যত জুয়ার দোকান বেশি, সে এলাকার লোক দেউলিয়া ও গৃহহীন হয় বেশি। যা আবার অন্যান্য ক্ষতির কারণ: দাম্পত্য কলহ, মানসিক ও শারীরিক অসুখবিসুখ, অপরাধ ইত্যাদি।
  • জুয়াড়িদের স্বাভাবিক বার্ধক্যে উপনীত হয়ে মৃত্যু কম, আত্মহত্যার হার বেশি। তারা তো বটেই, এমনকি তাদের স্ত্রী-সঙ্গীদের মাঝেও মানসিক সমস্যার হার উচ্চ।
  • জুয়াড়িদের মাঝে ড্রাগ এবিউজ ও এলকোহল আসক্তির হার বেশি। চুরি, ড্রাগব্যবসার হার বেশি।

যেভাবে কিশোর-তরুণদের মাঝে জুয়ার প্রবণতা বাড়ছে, তাতে সামনে আমাদে দুর্ভোগ সুনিশ্চিত। এখনই এতে বাধা দেয়া প্রয়োজন। সেজন্য দেখুন রিসার্চ কী বলছে:

  • প্রকাশ্য ধার্মিকতা যত বেশি, জুয়া খেলার হার তত কম। ধর্মকে যে যত জরুরি মনে করে, তার জুয়ায় অংশগ্রহণের হার তত কম। (Desmond Lam ২০০৬)
  • কমপক্ষে সাপ্তাহিক ধর্মসভায় যেসব কিশোর যোগ দেয় তাদের মাঝে জীবনে একবারও জুয়ার প্রবণতা কম।

তাহলে এখন বলুন, বাচ্চাদের ধর্মবোধ বাড়ানো দরকার, নাকি কমিয়ে সেক্যুলার, কম ধার্মিক, নির্ধর্মী বানানো দরকার? কোনটা জাতির জন্য পজিটিভ?

() ডিপ্রেশন ও আত্মহত্যা:

  • ১৫-১৯ বছর বয়েসীদের মৃত্যুর ৪র্থ প্রধান কারণ আত্মহত্যা।
  • ডিপ্রেশনে ভোগে দুনিয়ার ৫% মানুষ। প্রায় ২৮০ মিলিয়ন মানুষ। যাদের ৫-৮% আত্মহত্যা করে বসে।
  • বিশেষ করে কিশোর বয়সে ডিপ্রেশন ও স্ট্রেসের জন্য (most frequently reported stressor) সবচেয়ে বেশি দায়ী প্রেমের সম্পর্ক (Jackson & Finney, 2002)।
  • কিশোর বয়সে রোমান্টিক স্ট্রেসে ডিপ্রেশনের উপসর্গগুলো অনেক উচ্চমাত্রায় পাওয়া যায় (Anderson, Salk, & Hyde, 2015)

তাহলে পাঠ্যপুস্তকে যে ধাপে ধাপে শিশু-কিশোরদের প্রেমের সম্পর্কে ঠেলে দেয়া হচ্ছে, এটা কি কল্যাণকর হচ্ছে কিনা। মনের অনুভূতি প্রকাশের নাম দিয়ে ছেলে-মেয়েদের মাঝে আকর্ষণ উস্কে দেবার পরিবেশ তৈরি করা হলো, এটা আমাদের পরবর্তী প্রজন্মে ডিপ্রেশন ও আত্মহত্যার হার বাড়াবে। এই যে সমাধান—

এখন বলুন, বাচ্চাদের ধর্মহীন দেখতে চান, নাকি ধার্মিক দেখতে চান। কারিকুলামের মাধ্যমে যে ধর্মজ্ঞানহীন, ধর্মবোধহীন, বেহায়া প্রজন্ম গড়ার এজেন্ডা, এটা কি দক্ষ-সুস্থ জাতিগঠনের পক্ষে নাকি বিপক্ষে?

() দানশীলতা

নানান আপদে-বিপদে সরকারের একার পক্ষে সামাল দেয়া সম্ভব হয় না। সরকারি সাহায্য আসার আগে প্রয়োজন হয় স্থানীয় দানশীল উদ্যোগ। বিশাল এই রাষ্ট্র, বিপুল জনগোষ্ঠীর প্রোপার ম্যানেজমেন্টের জন্য চাই সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ ও মানবতা। রিসার্চ বলছে:

  • সেক্যুলারদের চেয়ে ধার্মিকদের দানের প্রবণতা ২৫% বেশি। স্বেচ্ছাসেবার প্রবণতা ২৩% বেশি।
  • অধার্মিকরা নিজে ভোগের প্রতি গুরুত্ব দেয়, ব্র্যান্ডের প্রডাক্টের গুরুত্ব বেশি দেয়। ধার্মিকেরা আবেগ থেকে পণ্য কেনে কম (impulse purchase)। পণ্য ক্রয়ে খরচ করে কম।
  • বৃটেনে মুসলিমরা অন্যান্যদের চেয়ে বেশি দান-খয়রাত করে। আমেরিকায় মুসলিমরা বছরে বেশি দান করে অন্যান্যদের চেয়ে। ২০২০ সালে অন্যান্যরা যেখানে $১৯০৬-এ, সেখানে মুসলিমরা গড়ে $৩২০০। (Siddiqui, ২০২১)

এখানেও সেক্যুলার জনগোষ্ঠী গড়ে তোলার চেয়ে ধার্মিক প্রজন্ম গড়ে তোলা সরকারের উদ্দেশ্য ও ভাবমূর্তির জন্য বেশি সহায়ক। ধার্মিক নাগরিক সরকারের সহযোগী ও অংশীদার হিসেবে কাজ করে।  

উপরের আলোচনা থেকে স্পষ্ট, বর্তমান কারিকুলাম দ্বারা একটি বিশেষ মহল জাতিকে ধ্বংস করতে উন্মুখ। মদ্যপ, ব্যভিচারী, ডিপ্রেসড, আত্মহত্যা-উন্মুখ, জুয়াড়ি, কঞ্জুষ স্বার্থপর জাতি গঠনের প্রকল্প হাতে নিয়েছে এই গোষ্ঠীটিহিন্দু-মুসলিম সব জোর করে একাকার করে জবরদস্তি সেক্যুলার জাতিগঠন নয়,  বরং ধার্মিক মুসলিম ও ধার্মিক হিন্দু জনগণ গড়ে তুললেই তা জাতির মঙ্গল বয়ে আনবে। শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ, দক্ষ, ফোকাসড এবং নীতিবান প্রজন্মই আমাদের পৌঁছে দেবে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে।

এটা শুধু হুজুরদের ইস্যু না। সর্বস্তরের সচেতন নাগরিক এই পাঠ্যক্রম ও ধর্মহীন শিক্ষাব্যবস্থার বিরুদ্ধে আওয়াজ উঠান। কোন দুনিয়ায় রেখে যাচ্ছেন নিজের সন্তানকে? মদ্যপ, ব্যভিচারী, ডিপ্রেসড, আত্মহত্যা-উন্মুখ, জুয়াড়ি হবার জন্য? এক অসহ্য জীবন যাপনের জন্য?