[৭ম শ্রেণীর ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ের ছবিটা দেখুন]
আজ থেকে ৩০ বছর আগের বস্তাপচা সোশ্যাল কনস্ট্রাকশন থিওরি বাচ্চাদের কচিমনে সত্য হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে, যা গত ২০ বছর ধরে মিথ্যা প্রমাণিত হচ্ছে একের পর এক রিসার্চে।
মায়ের পেট থেকেই একই ধরনের খেলনা দিয়ে তাদের খেলার কথা ছিল না। একই ধরনের খেলনা দিয়ে ছেলেবাবু-মেয়েবাবু যে খেলে না, ছেলেরা গাড়ি আর মেয়েরা পুতুল দিয়ে খেলে, এই পার্থক্য বাচ্চারা মায়ের পেট থেকেই নিয়ে আসে (Cherney & London, 2006; Davis & Hines, 2020; Hines & Davis, 2018; Todd et al., 2017) ।[১]
বিজ্ঞান আমাদেরকে বলছে, ছেলেশিশু-মেয়েশিশুর শারীরিক এবং মানসিক গঠন মায়ের পেট থেকেই ভিন্ন। মায়ের পেটে ছেলেশিশুর বয়স যখন ৬-৭ সপ্তাহ (৪২ দিন) তখন তার Y ক্রোমোসোমে SRY নামক একটা জিনের কারণে ছোট্ট কুঁড়ির মতো অণ্ডকোষ থেকে বের হতে থাকে টেস্টোস্টেরোন নামক হরমোনের বন্যা [২]। রক্তে ছড়িয়ে পড়ে সেই হরমোন মগজের গঠনে বিশেষ বিশেষ পরিবর্তন আনে (Lombardo et al. 2012)। পুরুষ হরমোন টেস্টোস্টেরোনের প্রভাবে ছেলেরা মায়ের গর্ভেই হয়ে ওঠে পুরুষ। [৩]
একইভাবে নারী হরমোন ইস্ট্রোজেনের প্রভাবে মেয়েদের ব্রেইন মাতৃগর্ভেই হয়ে ওঠে নারী৷ (Hara et al., 2015, Peper et al., 2011; Galea et al., 2013) [৩]
গত ২০ বছর যাবৎ ভুল-মিথ্যা প্রমাণিত তথ্য দিয়ে আমাদের সন্তানকে বুঝানো হচ্ছে: তুমি জন্ম থেকে পুরুষ নও, তোমাকে এই সমাজ-পরিবার পুরুষের খেলনা-পোশাক এসব দিয়ে পুরুষ হতে বাধ্য করেছে। বলা হচ্ছে, ছেলে আর মেয়েদের যে আলাদা আচরণ তা সমাজের চাপিয়ে দেয়া। মিথ্যা তথ্য দিয়ে প্রচলিত প্রথা-পদ্ধতি ও রীতিনীতির প্রতি বাচ্চার মনে সন্দেহ সৃষ্টি করা হচ্ছে পরিকল্পিতভাবে। কতবড় সর্বনাশ করা হচ্ছে আমাদের সন্তানদের যে, তারা নিজেদের লিঙ্গ নিয়েই সন্দেহে পড়ে যাবে?
এই পৃষ্ঠাটা খুবই ভয়ংকর। মগজধোলায়ের সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো, উত্তর দেবার বদলে মাথায় কোশ্চেন ঢুকিয়ে দেয়া। এই কাজটাই এখানে করা হয়েছে। উত্তর পাবার চেয়ে বাচ্চাদের মনে প্রশ্ন তোলা, তার মনে সংশয় জাগানোটাই ধর্মহীনদের মূল উদ্দেশ্য। দেখবেন নাস্তিকরাও একই কাজ করে, প্রশ্ন জাগায়। কিন্তু উত্তর নেয় না।
এই প্রশ্নগুলোর সঠিক উত্তর জেনে নিন ও বাচ্চাদের জানান।
- প্রশ্ন ১: আমরা নিজেদের ছেলে ও মেয়ে বলে আলাদা করে চিনি কীভাবে?
- উত্তর: আমাদের জন্মলিঙ্গ দেখে আমরা ছেলে-মেয়ে চিনি।
- প্রশ্ন ২: ছেলে বা মেয়ে হিসেবে আমাদের পছন্দের পোশাক, রং, খেলনা, কাজগুলো কি নিজেরাই পছন্দ করি?
- উত্তর : হ্যাঁ, আমরা নিজেরাই পছন্দ করি। কেননা মায়ের পেট থেকেই আমরা আমাদের আলাদা পছন্দ নিয়ে আসি (Cherney & London, 2006; Davis & Hines, 2020; Hines & Davis, 2018; Todd et al., 2017)। জন্মের পর মা-বাবা এতে আরও সাহায্য করেন।
- প্রশ্ন ৩: ছেলেদের খেলনা মেয়েদের খেলনা, ছেলেদের কাজ মেয়েদের কাজ কীসের ভিত্তিতে নির্দিষ্ট করি?
- উত্তর: খেলনা-কাজ ইত্যাদির পছন্দের যে পার্থক্য, সেটাও আমরা মায়ের পেট থেকেই নিয়ে আসি। আমাদের ব্রেইনের গঠন জন্মের আগে থেকেই ভিন্ন। সে হিসেবে আমাদের চিন্তার প্রক্রিয়া, স্মৃতি, আগ্রহ, ঝোঁক, দক্ষতা মায়ের পেট থেকেই ভিন্ন। সমাজ একে আরও বেগবান করে মাত্র। (Lombardo et al. 2012, Hara et al., 2015, Peper et al., 2011; Galea et al., 2013, Cherney & London, 2006; Davis & Hines, 2020; Hines & Davis, 2018; Todd et al., 2017)
- প্রশ্ন ৪: একজন মানুষকে বাইরে থেকে দেখেই কি সবসময় বুঝা যায় সে ছেলে না মেয়ে?
- উত্তর: বুঝা যাওয়া উচিত। সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ (৯৯.৫০%) যে ভিতরে নারী সে বাইরেও নারী হবেন। যে বাইরে পুরুষ, তিনি ভিতরেও পুরুষ হবেন। সামান্য কিছু মানুষে সমস্যা থাকতে পারে, যেটা বয়ঃসন্ধিকালে এমনিতেই কিংবা সার্জারির মাধ্যমে স্পষ্ট করা সম্ভব। ১৮ কোটি মানুষের মাঝে মাত্র সাড়ে ১২ হাজার হিজড়া, যাদের অপারেশানের মাধ্যমে স্বাভাবিক নারী/পুরুষের জীবন দেয়া সম্ভব। এদেরকে আলাদা বৈচিত্র্য হিসেবে আলাদা করে দেবার প্রয়োজন নেই। [সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়]
- প্রশ্ন ৫: অন্যরা আমাদের সম্পর্কে কি ভাবছে, তা আমাদের লিঙ্গ পরিচয়কে কীভাবে প্রভাবিত করে?
- উত্তর: অন্যরা কি ভাবছে তা আমার লিঙ্গ পরিচয়কে প্রভাবিত করে না। বরং আমি কী করছি সেটা তাদের ধারণাকে প্রভাবিত করে। আমার জন্মলিঙ্গ যা, আমার কর্মলিঙ্গও সেটাই হওয়া উচিত। এর উল্টোটা আমার শরীরের জন্যও খারাপ, আমার পরিবারের জন্যও খারাপ, সমাজের জন্যও খারাপ।
- প্রশ্ন ৬: এমনটা কি হতে পারে যে, কাউকে আমরা তার শারীরিক বৈশিষ্ট্য দেখে, গলার স্বর শুনে ছেলে বা মেয়ে বলে ভাবছি কিন্তু সে নিজেকে ভিন্ন কিছু ভাবছে?
- উত্তর: এমনটা হলে সে অসুস্থ। তার দ্রুত চিকিৎসা প্রয়োজন। যথাযথ চিকিৎসার দ্বারা তার অসুস্থ চিন্তাকে সুস্থ করতে হবে। তার অসুস্থ চিন্তাকে কোনোরকম পাত্তা দেয়া যাবে না। কেননা ৭০% এমন বিকৃত ভাবনা (Gender dysphoria) বয়ঃসন্ধিকালে এমনিতেই ভালো হয়ে যায়। একে বলে Desistance. বাকি যারা আছে, তাদেরকেও থেরাপির মাধ্যমে সুস্থ চিন্তায় ফেরানো সম্ভব।
উত্তরগুলো জেনে নিকটস্থ বাচ্চাদের জানিয়ে দিন। শিক্ষকদের কাছে পৌঁছান।
রেফারেন্স
[১]
- Cherney, I. D., & London, K. (2006). Gender-linked differences in the toys, television shows, computer games, and outdoor activities of 5- to 13-year-old children. Sex Roles: A Journal of Research, 54(9-10), 717–726.
- Davis, J. T. M., & Hines, M. (2020). How large are gender differences in toy preferences? A systematic review and meta-analysis of toy preference research. Archives of Sexual Behavior, 49(2), 373–394.
- Todd, Brenda & Fischer, Rico & Costa, Steven & Roestorf, Amanda & Harbour, Kate & Hardiman, Paul & Barry, John. (2017). Sex differences in children's toy preferences: A systematic review, meta-regression, and meta-analysis. Infant and Child Development. 27. e2064.
[২] Endocrinology of the mammalian fetal testis. (O’Shaughnessy 2011, Ivell 2017)
[৩] Lombardo, M. V., Ashwin, E., Auyeung, B., Chakrabarti, B., Taylor, K., Hackett, G., Bullmore, E. T., & Baron-Cohen, S. (2012). Fetal testosterone influences sexually dimorphic gray matter in the human brain. The Journal of neuroscience : the official journal of the Society for Neuroscience, 32(2), 674–680.
[৪] ব্রেইন জুড়ে প্রচুর ইস্ট্রোজেন রিসেপ্টর ছড়িয়ে রয়েছে (Hara et al., 2015)। যা দ্বারা জরুরি সব প্রক্রিয়া সম্পাদিত হয় যেমন : জ্ঞান আহরণের প্রক্রিয়া বা ইন্দ্রিয়-ভাবনা-অভিজ্ঞতার আলোকে কিছু বুঝে নেওয়া (cognition), উদ্বেগ-টেনশন, দেহ-তাপমাত্রা, খাদ্যাভ্যাস, যৌন আচরণ (Do Rego et al., 2009)। এর প্রভাবে ব্রেইনের গঠন পরিবর্তন হয়ে যায় (Goldstein ২০০১) এবং সারা জীবনই ব্রেইন ও আচরণকে এই হরমোন নানাভাবে প্রভাবিত করতে থাকে (potent modulators of brain plasticity across the life-span) (Peper et al., 2011; Galea et al., 2013)।